ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ করা নিষেধ

হজের প্রথম রুকন ইহরাম। ইহরাম ছাড়া হজ কল্পনাই করা যায় না। ইহরামের মাধ্যমেই মানুষ হজ ও ওমরার কাজ শুরু করে। নামাজের তাকবিরে তাহরিমার মতো ইহরামের দ্বারাই স্বাভাবিক অবস্থার বৈধ কাজসহ অবৈধ সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

ইহরাম বাধার  পর  হজ ও  ওমরাকারীর জন্য কিছু নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে। ইহরামকারীদের জন্য নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় কাজগুলো হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ইহরামকারীর জন্য যা নিষিদ্ধ বা বর্জনীয়
1) হজ বা ওমরায় গমণকারী স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর যৌন সম্ভোগ ও এ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করা নিষেধ।
2) পুরুষের জন্য শরীর বা কোনো অঙ্গের আকার অনুযায়ী তৈরিকৃত বা সেলাইকৃত কাপড় পরা নিষিদ্ধ। যেমন- পাঞ্জাবি, জুব্বা, শার্ট, সেলোয়ার, প্যান্ট, গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার, জাঙ্গিয়া ইত্যাদি।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, মুহরিম (ইহরাম পরিহিত) কী কী কাপড় পরতে পারবে? তখন তিনি বলেন, জামা-পাগড়ি, পাজামা, টুপি ও মোজা পরবে না। তবে জুতা না থাকলে চামড়ার মোজা গিরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরতে পারবে। তোমরা এমন কোনো কাপড় পরিধান করো না যাতে ‘জাফরান’ বা ‘ওয়ারছ’ লেগেছে।  (মুসলিম, খণ্ড: ০১, হাদিস নং: ৩৭২)

ইহরামের কাপড় ছিঁড়ে গেলে তা সেলাই করে কিংবা জোড়া দিয়ে পরা করা যাবে। তবে ইহরামের কাপড় এ ধরনের সেলাইমুক্ত হওয়াই ভালো। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৮১; শরহু লুবাবিল মানাসিক: ৯৮)

ইহরাম অবস্থায় সেলাইযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করা ও বেল্ট বাঁধা নিষিদ্ধ নয়। তাবেয়ি উরওয়া (রহ.) মুহরিমের জন্য টাকা-পয়সা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রক্ষার উদ্দেশে ব্যাগ ব্যবহার করা বৈধ মনে করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৬৯৯)

তাউস (রহ.) বলেন, মুহরিম কোমরবন্দ (বেল্ট) ব্যবহার করতে পারবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৫৬৮৯)

পুরুষের জন্য পায়ের পাতার উপরের উঁচু হাড় ঢেকে যায় এমন জুতা পরিধান করা নিষেধ। তাই এমন জুতা বা স্যান্ডেল পরতে হবে যা পরলে ওই উচু অংশ খোলা থাকে। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৯০)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা চাদর, লুঙ্গি ও চপ্পল পরে ইহরাম বাঁধবে। যদি চপ্পল না থাকে তবে চামড়ার মোজা গীরার নিচ পর্যন্ত কেটে পরিধান করবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ৪৮৮১)

3) পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষেধ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, মুখমণ্ডল ও তার উপরের অংশ মাথার অন্তর্ভুক্ত। অতএব ইহরাম গ্রহণকারী থুতনী থেকে উপরের দিকে আবৃত করবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস নং: ১৪৪৫২)

নারীদের জন্য মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষেধ নয়। তবে মুখমণ্ডলে কাপড় লাগানো নিষেধ। তাই তারা পর পুরুষের সামনে এমনভাবে মুখমণ্ডল আবৃত করবেন যেন তাতে কাপড়ের স্পর্শ না লাগে।   মহিলাগণ নেকাব ব্যবহারের জন্য উপরের ছবির মত ক্যাপ মাথায় দিয়ে তার উপর দিয়ে কাপর এমনভাবে দিবেন যাতে কাপরটি মুখ স্পর্শ না করে । নেকাবের এই ক্যাপটি মেকাত, মক্কা ও বিভিন্ন ইসলামিক দোকানগুলোতে পাবেন। 
4) ইহরামের পর সুগন্ধি ব্যবহার করা। কাপড় থেকে ইহরামের আগে ব্যবহৃত সুগন্ধির ঘ্রাণে কোনো সমস্যা নেই।
5) ইহরাম অবস্থায় চুল বা পশম কাটা বা উপড়ানো যাবে না।
6) নখ কাটা যাবে না; তবে ভাঙ্গা নখ ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষতি নেই।
7) কোনো স্থলজ পশু শিকার করা। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ইহরামরত অবস্থায় শিকার করো না। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৯৫) এমনকি শিকারকে হাঁকানো বা অন্যকে শিকারের কাজে সহযোগিতা করা বা যবেহ করাও নিষেধ।
8) নিজের শরীর বা মাথা থেকে উকুন বা উকুন জাতীয় প্রাণী বধ করা যাবে না। তবে সাপ, মশা-মাছি, ডাশ, গিরগিটি, ইঁদুর, পাগলা কুকুর ইত্যাদি মারার বৈধতা রয়েছে।

ইহরাম হলো হজ ও ওমরার জন্য প্রথম শর্ত। যা ভঙ্গ হয়ে গেলে হজ ও ওমরা আদায় হবে না। হজ ও ওমরা পালনেচ্ছুদেরকে যথাযথভাবে হজ ও ওমরা আদায়ে ইহরামের নিষিদ্ধ ও বর্জনীয় বিষয়ের প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ ও ওমরা পালনকারীদেরকে ইহরামের যাবতীয় বিষয়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Loading

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।