আসসালামু আলাইকুম। আমার বিবি নামাজে অবহেলার কারণে বাপের বাড়ি চলে যাও বা নামাজে অবহেলা করলে বাবার বাড়ি চলে যেতে হবে। এ ধরনের কথাবার্তা বলেছি।
এছাড়া অন্য সময় মনে এমন চিন্তা আসতো। যে আমি আরও সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু তালাকের দেওয়ার চিন্তা আসত না।
মনে আসতো আমার বিবি থাকলে তো চাইলেও ২য় বিয়ে করতে দিবে না বা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করা যাবে না। ও মারা গেলে বা চলে গেলে বা আর না আসলে আরও সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারব।
এখন মনের চিন্তাগুলো বার বার আমার মনে আসতেছে। আর এই চিন্তা আসছে নামাজে অবহেলার কারণে আমার বিবিকে বাবার বাড়ি চলে যেতে বলেছি। তখন এই মনের চিন্তাগুলো তখন মনে ছিল কি না? যখন নামাজে অবহেলার কারণে বাবার বাড়ি যেতে বলেছি। এই চিন্তাগুলো তখন মনে ছিল কি এটার ওয়াসওয়াসা আসছে। আর এই চিন্তাগুলো কি তালাকের নিয়ত কি না?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রশ্নবর্নিত কথাগুলো (যেমন নামাজে অবহেলা করলে বাপের বাড়ি চলে যাও ইত্যাদি) যেহেতু আপনি তালাকের নিয়তে বলেননি তাই উক্ত কথাগুলোর মাধ্যমে আপনার স্ত্রীর উপরে কোন তালাক পতিত হয়নি সুতরাং আপনাদের ঘর সংসার করতে কোন প্রকার সমস্যা নেই।
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই,অহেতুক পেরেশানী করে নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করবেন না। আপনি আপনার স্বাভাবিক কাজগুলো করতে থাকুন এবং মনের তীব্র কনফিউশন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিন। এতে আপনার বৈবাহিক সম্পর্কে কোনো ধরণের ক্ষতি হবে না। কেননা, আপনি তালাক নিয়ে যতই চিন্তা করুন না কেন, কিংবা মনে মনে কথা বলুন না কেন, কিংবা মনে মনে যতই উল্লেখিত শর্ত আওড়ান না কেন, কিংবা নিয়ত ও সংকল্প করুন না কেন– যতক্ষণ পর্যন্ত মুখে উচ্চারণের বিষয়টি পরিপূর্ণ নিশ্চিত হবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত তালাক হবে না। এর দলিল হল, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ تَجَاوَزَ لأُمَّتِي مَا وَسْوَسَتْ بِهِ وَحَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ بِهِ
‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তাআলা আমার উম্মতের ওয়াসওয়াসা, মনে মনে কথা বলা ক্ষমা করে দিয়েছেন; যতক্ষণ না সে কর্ম করে কিংবা কথা বলে।’ (সহিহ বুখারী ৬৬৬৪ সহিহ মুসলিম ১২৭)
উকবাহ ইবনু আ’মির রাযি. বলেন,
لاَ يَجُوزُ طَلاَقُ الْمُوَسْوِسِ
‘ওয়াসওয়াসা সম্পন্ন (সন্দেহের বাতিকগ্রস্ত) ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয় না।’ (সহিহ বুখারী, অধ্যায় ৬৮)
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,
এক.
তালাক সংক্রান্ত কোন মাসআলা পড়বেন না। কাউকে জিজ্ঞাসা করতেও যাবেন না। কারো সাথে এ সংক্রান্ত আলাপ ও আলোচনাও করবেন না। মনের মাঝে এ বিষয়ক কোন কিছু আসতে দিবেন না। আসলেই অন্য বিষয় নিয়ে মগ্ন হয়ে যাবেন, প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলবেন। ইবনে হাজার আল-হাইতামি রহ. বলেন,
له دواء نافع وهو الإعراض عنها جملة كافية ، وإن كان في النفس من التردد ما كان
‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)
দুই. হযরত ইবনে আব্দুস সালাম রহ. বলেন, ওয়াসওয়াসার প্রতিষেধক হচ্ছে- ব্যক্তি এ বিশ্বাস করা যে, এটি শয়তানী কুমন্ত্রণা। ইবলিস এটি তার অন্তরে আরোপ করছে এবং তার সাথে লড়াই করছে। এতে করে সে ব্যক্তি জিহাদ করার সওয়াব পাবে। কেননা সে ব্যক্তি আল্লাহ্র শত্রুর সাথে লড়াই করছে। যদি কেউ এভাবে অনুভব করতে পারে তাহলে শয়তান তার থেকে পালিয়ে যাবে।
তিন. সকাল ও সন্ধ্যায় পড়ুন-
–أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
(আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমার আশ্রয় প্রার্থনা করি তার অসম্ভষ্টি ও শাস্তি থেকে এবং তার বান্দার অনিষ্ট থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে ও শয়তানের সংস্পর্শ থেকে।)
চার. ফজর ও মাগরিবের পর এবং ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক ও নাস পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উকবা ইবনে আমের রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ ، لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ؟ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
তোমার কি জানা নেই আজ রাতে আমার ওপর যে আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে এগুলোর মতো কোনো আয়াত দেখা যায় নি। আর তা হলো কুল আয়ুজু বি রাব্বিল ফালাক ও কুল আয়ুজু বি রাব্বিন নাস। (মুসলিম ৮১৪)
আমরা আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন যে ওয়াসওয়াসায় আপনি আক্রান্ত তা দূর করে দেন। আমাদের ও আপনার ঈমান
, দ্বীনদারি ও তাকওয়া বাড়িয়ে দেন।