কোরআন শরীফ দেখে তেলাওয়াত ও মোবাইলে তেলাওয়াতের কী সমান সওয়াব পাওয়া যায়?
মোবাইলে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য ওযু করা কী জরুরী?
بسم الله الرحمن الرحيم
সমাধান
সম্মানিত দ্বিনী ভাই!
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
আপনার দেওয়া দুইটি প্রশ্নের উত্তর।
এক নং প্রশ্নের উত্তর।
কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে- যেভাবে পড়লে তেলাওয়াতকারী ব্যক্তির একাগ্রতা বাড়ে সেভাবে তেলাওয়াত করা। যদি মোবাইল স্ক্রিন থেকে পড়লে একাগ্রতা বাড়ে তাহলে সেটাই উত্তম। আর যদি মুসহাফ (প্রিন্ট কপি) থেকে পড়লে একাগ্রতা বাড়ে তাহলে সেটাই করা উত্তম।
এই ফর্মুলার পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আপনি যদি একাগ্র চিত্তে ও গভীর চিন্তা-ভাবনাসহ মোবাইল থেকে কুরআন পড়েন তাহলে ইনশাআল্লাহ্ আপনার সওয়াবে কমতি হবে না। কারণ মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- অন্তরের উপস্থিতি ও কুরআনের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর।
লিখিত কুরআন যেহেতু মূলত মূল কুরআনের প্রতিচ্ছবি তথা প্রকাশক। আর সেই কুরআন পবিত্র হওয়া ছাড়া স্পর্শ করা নিষেধ মর্মে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ এসেছে। তাই যেখানেই কুরআনের আয়াত ভেসে উঠবে উক্ত স্থানটি অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ হবে না। তাই মোবাইল ও কম্পিউটার স্ক্রীনে পরিদৃষ্ট কুরআনের আয়াতও অজু ছাড়া স্পর্শ করা জায়েজ হবে না।
لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ [٥٦:٧٩
যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍأَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬}
عن عبد الله بن عمر أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:”لا يمس القرآن إلا طاهر“.
رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। {মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২}
আল্লামা হাফেজ নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী বলেনঃ ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা গ্রহণযোগ্য।
“إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة”،
ইমাম নববী রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ দের। এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়। {শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০}
وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। {মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬}
হযরত ওমর রাঃ যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন, তখন তার বোন বলেছিলেন যে, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না। {মুসনাদুল বাজ্জার-১/৪০১, মুস্তাদরাকে হাকেম-৪/৬৬, সুনানে দারা কুতনী-১/১২১, তাবাকাতুল কুবরা লিইবনে
সাদ-৩/২৬৭, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-১/৮৭}