আসসালাম আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। প্রিয় মুফতি সাহেব, আশা করি আল্লাহর রহমত এ ভালো আছেন। আমি অনেক পেরেশানির মধ্যে আছি মুফতি সাহেব। একটু দ্রুত উত্তর টা দিলে মনে একটু শান্তি আসবে। [মূল প্রশ্ন শেষ এর দিকে লেখা আছে]
পরিচয়:
ছেলে(আমি): [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] ২১ বছর বয়স, বাংলাদেশ এ থাকি (ঢাকা, রামপুরা), ইউনিভার্সিটির বিবিএ এর ২য় বর্ষের ছাত্র। হানাফী মাযহাব এর অনুসারী। ঠিকানা: রামপুরা।
মেয়ে: [নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] ১৮ বছর বয়স, ইংল্যান্ড থাকে। মাদ্রাসার ছাত্রী। হানাফী মাযহাব এর অনুসারী।
প্রাসঙ্গিক বিষয়: (মূল প্রশ্ন অংশ নিচে আছে)
৩ বছর আগে আমার সাথে একটি মেয়ের সোশাল মিডিয়া তে পরিচয় হয়। একটি মেসেজিং অ্যাপ এর মাধ্যমে। মেয়েটা থাকে ইংল্যান্ড এ। আমি থাকি বাংলাদেশে। মেয়েটি ঐখানকার একটি মাদ্রাসার ছাত্রী। সে বর্তমানে হিফজ করছে। মেয়েটির বাবা ওখানকার একজন মাদ্রাসার শিক্ষক। আমরা দুইজন একটি গ্রুপ চ্যাট এ ছিলাম। তো আমরা একসাথে গ্রুপ চ্যাট থেকে আলাদা হয়ে একে অপরকে সরাসরি মেসেজ করতে থাকি। ওই মেয়েটি আমার সাথে তার অনেক ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করে। তার পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলতে থাকে। আমি তাকে নানান ভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করতাম এবং তাকে নানান উপদেশ দিতাম। এরই মাঝে আমার ওই মেয়েটাকে ভালো লেগে যায়। এই ব্যাপার বোঝার পর মেয়েটি যাতে আমাকে ব্লক না করে দেয় এই কারণে দীর্ঘ ১.৫ বছর মেয়েটিকে কিছু জানায়নি আমি। কিন্তু গত মাসে আমি আর বিষয় টা সহ্য করতে পারি নি। আমার মনে অনেক খারাপ লাগতো এই বেপার টা। আমি দীন এর পথে চলার চেষ্টা করি। এবং এমন কাজ আমি আর করতে চাচ্ছিলাম না যেটা আল্লাহ অপছন্দ করবেন। আমি ভেবেছিলাম যে মেয়েটি আমাকে বিশ্বাস করে এত কথা বলেছে। আমি আর তাকে এই অন্ধকারে রাখবো না। আমি গত মাস এ মেয়েটাকে বলি যে আমি ওই মেয়ের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি এবং আমাদের আর চ্যাটিং করা ঠিক হবে না। ওর কাছে আমি মাফ চেয়ে নিলাম। ওই সময় ওই মেয়েটি আমাকে বলল যে সেও আমাকে অনেক ভালবাসে এবং সেও চিন্তা করছিলো যে আমাকে ব্যাপারটা বলবে। তারও এই ব্যাপারটা ভালো লাগছিল না। তার মনেও আল্লাহর ভয় হতো। সে আমাকে ধন্যবাদ জানায় তাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করার জন্য। পরের দিন ওই মেয়েটা আমাকে মেসেজ করে বলে যে, সে আমার প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমি একমাত্র ছেলে যার সাথে সে এত গভীর ভাবে নিজের কথাগুলো বলেছে। সে আমাকে অনেক ভালবাসে।
যেহেতু মেয়েটাকে আমিও ভালবাসতাম, আমি ওই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম যে মেয়েটার বাবা বা মা কি কখনও রাজি হবেন কিনা আমাদের বিয়েতে। মেয়েটি বললো যে সে ৯৯ ভাগ শিওর যে তার বাবা মা জিবনেও রাজি হবেন না আমাদের বিয়েতে। কেননা আমি একজন ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি যে তার বাবা মা কি তাকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে পারে কিনা। সে জানালো যে “না এমন কোনো পরিস্থিতি হবে না।” এই অবস্থায় মেয়েটি মৌখিক ভাবে আল্লাহর কাছে কসম করে যে “ আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি (আমার নাম) ছাড়া কাউকে কখনো বিয়ে করব না।” এই কথাটা সে আমাকে মেসেজ এও বলে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে আরো ভালো লাগে, এবং আমিও একই কসম করি আল্লাহ এর কাছে ওই মেয়েটির ব্যাপারে। আমরা সিদ্ধান্ত নি যে আমরা দুইজন অপেক্ষা করব একে অপরের জন্য। আমার ক্ষেত্রে যেহেতু আমার আপাতত কোনো ইনকাম নেই। পড়াশোনা করি, সেহেতু আমি যখন আমার নিজের পায়ে দাড়াতে পারবো তখন তাকে বিয়ে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারবো। আমার পড়াশোনার অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। তো আশা করেছিলাম যে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে জব করা শুরু করবো। পাশাপাশি মাস্টার্স করতে থাকবো। যখন আমি প্রস্তুত থাকবো তখন তাকে বিয়ে করে নিয়ে আসব। কিন্তু তার কথা ছিল যে সে তার মা কে ফেলে আসতে পারবে না তার পারিবারিক সমস্যার কারণে। কেননা সে তার মা কে অনেক ভালোবাসে। এবং পারিবারিক সেই সমস্যাটার (আমাকে গোপন রাখতে বলেছে) কারণে সে তার মাকে কখনো ফেলে আসতে পারবে না। তো আমরা দুজন এ ডিসিশন নি যে আমরা দুইজন অপেক্ষা করবো যতদিন না তার বাবা মা মারা যান। এরপর আমরা বিয়ে করে নিবো। তো আমরা এই কথা শেষ করার পর চিন্তা করলাম যে আমরা আর একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলবো না। কিন্তু আমরা একটি ডায়েরি এর মাধ্যমে যুক্ত ছিলাম যেখানে আমরা লেখালিখি করতাম (একে ওপরকে উদ্দেশ্য না করে শুধু কে কি করছে এই ব্যাপার গুলো)। কিন্তু ডায়েরি টা তেও আমরা আসতে আস্তে কথা বলা শুরু করে দেই। এইভাবে চলতে থাকে। আমরা দুইজন এ তওবা করি। মন এ বলি যে আর করবো না। পরে আবার এমন হয়ে যায় আবার তওবা করি। ওই মেয়েটা সারাদিন আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। এবং এতে করে তার ইবাদত এরও ক্ষতি হতে থাকে। সে তার হিফজ এ মনোযোগ দিতে পারতো না। সে চেষ্টা করেও আমার কথা মন থেকে সরাতে পারছিল না। আল্লাহর কাছে বার বার তওবা করতো। এদিকে আমারও একই অবস্থা। যত চেষ্টা করি, কিছুতেই তাকে মাথা থেকে বের করতে পারি না। উল্টো আমি ইচ্ছা করে তাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকি এবং পরে ভুল বুঝে আবার তওবা করি।
মূল প্রশ্নের বিষয় :
এমন পেরেশানির ভেতর থাকতে থাকতে দুইজন এ ডিসিশন নিলাম যে যেহেতু কসম করে ফেলছি যে একে অপরকে ছাড়া বিয়ে করবো না। সেহেতু নিকাহ টা করে ফেলি বাবা মা কে না জানিয়ে। এরপর না হয় আমরা পরে আবার লোক দেখানো বিয়ে করে ফেলবো। আমরা নিকাহ ছাড়া কোনো পথ দেখি নি মুফতি সাহেব। ওই মেয়েটা অনেক দীনদার। সে তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত। আমিও আল্লাহর কাছে প্রতিদিন তওবা করি। কিন্তু মুফতি সাহেব, আমরা দুইজন একে অপরের জন্য ভীষণ দুর্বল। আমরা আমাদের সম্পর্ক কে হালাল করতে চেয়েছিলাম। যদিও আমাদের এই দূরত্বের কারণে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার কোনো ঝুঁকি ছিল না। তার পরও আমরা তো গুনাহ এর সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম। এই কারণে ওই মেয়েটাকে আমি বলি যে, তুমি আমাকে বিয়ে করে ফেলো, তুমি আমাকে তোমার উকিল বানিয়ে নাও। আমি সরাসরি ২ জন পুরুষ সাক্ষীর সামনে কবুল করে নিবো। মেয়েটি এই বিষয়ে রাজি হয় এবং সে আমাকে মেসেজ করে বলে, (ইংরেজিতে) “ আমি অমুকের মেয়ে তোমুক, নিজেকে তোমার, ( অমুকের ছেলে তমুক) সাথে ৫০০০০ টাকা মোহরের বিনিময়ে বিয়ে করাতে চাই। এবং আমি তোমাকে আমাকে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য আমার উকিল হিসেবে নিযুক্ত করলাম।”. আমি এই বিষয়ে রাজি হলাম এই বলে, ” আমি তোমার পক্ষে উকিল হতে রাজি.”
পরের দিন ২ জন মুসলিম বালেগ পুরুষ সাক্ষীর এর সামনে ওর এই মেসেজ টা পড়ে শুনালাম। এরপর তাদের ২ জনকে সাক্ষী করে বললাম, “আমি অমুক এর মেয়ে তমুককে বিয়ে করে নেওয়ার জন্য তার দ্বারা নিযুক্ত উকিল হিসেবে আমি পঞ্চাশ হাজার টাকা মোহরের বিনিময়ে তার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলাম। ” এরপর এক সেকেন্ড বিরতি নেওয়ার পর বললাম, ” আমি অমুক এর ছেলে তমুক এই বিয়েটাকে কবুল করলাম” (ইংরেজিতেই বলেছি)
দ্রষ্টব্য:
১.মেয়েটি আমাকে যখন উকিল বানানোর জন্য মেসেজ করে তখন তার সাথে কোন সাক্ষী ছিল না। সে আমার সাথেও ছিল না যেহেতু আমরা ভিন্ন দেশে থাকি। সে শুধু মেসেজ এর মাধ্যমে আমাকে উকিল হিসেবে নিযুক্ত করে আমাদের বিয়ের জন্য। আমি সাক্ষীদের সামনে ইংরেজিতেই পুরো কথাটি বলেছিলাম এবং একদম লাইন বাই লাইন এই কথাগুলোই বলেছিলাম। সাক্ষিরা ইংরেজি বোঝে। সাক্ষীরা শুধু আমাকে চেনে। ওই মেয়েটাকে চেনে না। শুধু আমি যতটুকু বলেছি ওদেরকে ওরা অতটুকুই জানে।
২. বিয়ের আগে আমি ওই মেয়েকে বা ওই মেয়ে আমাকে নিজের চোখে দেখে নি বা কোনো ছবির মাধ্যমেও দেখে নি। আমরা ২ জন শুধু একে অপরকে সোশাল মিডিয়া এর মাধ্যমে চিনি। আমরা শুধু একবার একে অপরের গলা শুনেছি প্রাইভেট ভয়েস মেসেজ এ। শুধু একবার।
৩. আমরা বিয়েটা আমাদের বাবা মা কে না জানিয়ে করেছি।
৪. কুফু সংক্রান্ত বিষয়গুলো পেশ করছি,
(১) ধর্মীয় দিক:
মেয়ে: বর্তমান এ হিফজ করছে। মাদ্রাসার ছাত্রী। ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। পর্দাশীল। দ্বীনের ফরজ বিধি গুলো মেনে চলে। তার নামে কোনো বাজে কথা প্রচলিত নেই।
ছেলে (আমি): জেনারেল লাইনে শিক্ষিত। বর্তমান এ ইউনিভার্সিটি এর ২য় বর্ষের ছাত্র। দিন এর তাবলীগ এ যুক্ত। দ্বীন সম্পর্কে ফরজে আইন এর অতিরিক্ত কিছু সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখি। নজরের হেফাজত করার চেষ্টা করি। ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি এবং দ্বীনের ফরজ বিধি বিধান গুলো মেনে চলি। আমি মদ, গাঁজা বা যেকোনো কোনো নেশা দ্রব্য সেবন করি না। আমার গুনাহ কে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকি।
(২) সম্পত্তি:
মেয়ে: ওই মেয়েটার বাবার নিজের কোনো বাড়ি বা জমি নেই ইংল্যান্ড এ। ইন্ডিয়া তে কিছু জমি আছে যা মেয়েটা বলতে পারে নি যে সেটি তার বাবার কি না। মেয়েটির নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। এবং সে কোন কাজও করে না।
ছেলে (আমি): আমার বাবার ঢাকায় একটি নিজের ফ্ল্যাট আছে এবং দেশের বাড়িতে জমি এবং বাড়ি আছে। আমার নিজ সম্পত্তি বর্তমানে একটি ২০০০০০ টাকার মোটরবাইক যা আমার নামে রেজিষ্টার করা। আমার বর্তমানে কোনো চাকরি বাকরি নেই। বা কোনো ইনকাম নেই। বাবা আমার খরচ বহন করেন। বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা আল্লাহর রহমত এ সচ্ছল। বাবার ব্যবসা আমিই দেখছি
(৩) বংশ:
মেয়ে: বাবা এবং বাবার দিকের সবাই আলেম পরিবারের এবং তার বাবা ইংল্যান্ড এর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। মেয়েটি অনারব আজমী। সে কুরাইশ অথবা সৈয়দ বংশের নয়।
ছেলে(আমি): বাবা একটি মাঝারি সাইজ এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং আমার দাদা একজন মুক্তিযোদ্ধা। এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ আমার বাবা কে চিনেন এবং আমাদের বংশ সম্মানিত।
প্রশ্ন: প্রিয় মুফতি সাহেব, এই অবস্থায় আমাদের বিয়ে হয়েছে কিনা সেটা জানালে অনেক উপকৃত হব
এই কয়দিন আমরা ২ জন অনেক পেরেশানির মধ্যে আছি। উত্তর টা একটু দ্রুত দেওয়ার আশায় লিখলাম। আল্লাহ আপনার এবং আপনাদের মত সকল আলেমদেরকে কবুল করে নিন সেই দোয়া করি। আমীন।
এটি একই প্রশ্ন যা পরবর্তী প্রশ্নতে একই রকম রয়েছে। তাই আমরা পরবর্তী প্রশ্নে এই প্রশ্নের উত্তর প্রকাশ করেছি।