BN / EN
392 দেখা হয়েছেবিবাহবিয়ে
0
0 টি মন্তব্য

আস্সালামু-আলাইকুম।আমি ২০২৩ সালে এস এস সি পরিক্ষা দিয়েছি।আমার বর্তমান বয়স ১৭ বছরা।আমি আর আমার এক বন্ধু গত ১২ বছর যাবত এক সাথে পড়া-লিখা করে আসেতেছি।আমরা ছোট থেকেই একজন অপর জনকে পছন্দ করি।কিন্তু কেউ করোর কাছে প্রকাশ করতাম না।আমি আর ছেলেটা আমার বাবার নূরানী মাদ্রাসায় এক সাথে ৭ বছর-৫ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যায়ন করেছি।পরবর্তীতে আমরা দুই জনই স্কুলে চলে যাই।২০২২ সালে আমরা যখন ১০ম শ্রেণিতে উঠি তখন একে অপরের সাথে আমাদের পছন্দের কথা শেয়ার করি।আমরা দুই জনই মাদ্রাসার পড়ার উছিলায় কিছুটা দ্বীনদারিতা ছিলো।অমি স্কুলে পড়ার পড়ও পর্দা করতাম ,৫ ওয়াক্ত নামায পড়তাম ; আলহামদুলিল্লাহ।আর ছেলেটাও ৫ ওয়াক্ত নামায পড়তো, দাড়ি ছিলো, তবলিগের সাথে জড়িত- এস এস সির পর এক চিল্লাও দিয়েছে।এ অবস্থায় আমরা কোনো ভাবেই হারাম সম্পর্কে থাকতে চাচ্ছিলাম না।আমাদের বাবা মা আমাদের পছন্দের কথা জানতো।আমাদের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিলো।আমরা এই দ্বীনদার মনোভাব নিয়ে হারাম সম্পর্কে থাকতে চাচ্ছিলাম না,এত কম বয়সে বাসায় বিয়ের কথা বলতেও পারতেছিলাম না আবার ১২ বছরের পরিচয় থেকে পছন্দ-আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতেও পারতেছিলাম না।সিদ্ধান্ত নেই আমরা কোনো ভাবে বিয়ে করা গেলে বিয়ে করবো।তখন ছেলেটা হাজার হাজার সদস্যের ফেসবুক গ্রুপ ফতুয়া বিভাগের একজন মুফতি(মুফতি আমীর হামজা সিদ্দিকী) হুজুরের সাথে খোলামেলা কথা বলেন যে,অমরা কোনো ভাবে বাবা মা ছাড়া বিবাহ করতে পারবো কি না।ছেলেটার জোড়োজোড়িতে সে বলল হ্যাঁ।হানাফি মাযহাব অনুযায়ী বাবার-মার অনুপস্থিতিতে বিবাহ করা যায়।তিনি বলেন বিবাহ হওয়ার শর্তে বাবার অনুমতির বাধ্যবাধকতা নাই।পরে উনি হানাফি মাযহাব অনুসারে বিয়ের পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়।আমরা সে পদ্ধতি অনুসারে ২৬ জুন ২০২২ সালে বিবাহ করি।পদ্ধতিটি নিম্নরূপঃ
২ জন বালেগ বন্ধু ও এক জন বালেগা বান্ধবী মোট ৩ জনের উপস্থিতিতে ছেলে আমাকে বলে “আমি অমুকের ছেলে অমুক ৫ হাজার টাকা দেন মোহর ধার্য করিয়া তুমি অমুকের মেয়ে অমুককে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম,তুমি রাজি থাকলে আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলো।”তখন আমি সবার সামনে জোরে জোরে আলহামদুলিল্লাহ কবুল বলেছি ৩ বার। এরপর আমরা সময় করে মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম।ঠিক সে সময় সেই ফতুয়া বিভাগ গ্রুপের বিভিন্ন তালা* সংক্রান্ত পোষ্ট চোখে পড়তো ছেলেটার। বিভিন্ন জনের প্রশ্ন ও উত্তর দেখতো।এসব দেখে দেখে তার মাথায় সব সময় এই তালা* শব্দটা ঘুর ঘুর করতো।তখন ছেলেটা ওয়াস-ওয়াসার রোগী ছিলো।যেমন-অনেক সময় নিয়ে অযু করতো।সুরা-ক্বেরাতে ক্বফ/কাফের মাখরাজের স্থনের পরিবর্তনের সন্দেহ করে একই নামায কয়েকবার পড়তো।ছোট সমস্যা গুলো বড় মনে করে তা সমাধান করার চেষ্টা করতো।তখন মজা করে ছেলেটা আমাকে অনেক সময় বলতো যাগা যাগা যাগা ।অনেক সময় দুষ্টামি করে বলতো।বিভিন্ন সময় এসব শব্দ বলার সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে তালা* নিয়ত হয়ে যেত।গ্রুপ থেকে ছেলেটা জানতে পারে তালা* যে কোনো অবস্থাতেই হয়।হাসা-হাসি,রাগ বা দুষ্টামির ছলে দিলেও তা গণ্য হবে।এবং জানতে পারে যে সরাসরি তাল* শব্দ ব্যবহার না করেও বিভিন্ন শব্দ দ্বারাও নিয়তের উপর তালা* হয়।তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও সে যাগা বলার সময় এ শব্দ দ্বারা তালা* দিলাম এরকম নিয়ত হয়ে যেত।তখন সে ওয়াস-ওয়াসার কারনে বিভিন্ন মুফতির থেকে ফতুয়া নিতে শুরু করে ।এক সময় জানতে পারে যে শব্দ এসব শব্দ দিয়ে তালা* হতে হলে আগে নিয়ত করে তারপর উচ্চারন করতে হবে।কিন্তু এই ক্ষেত্রে নিয়তটা যাগা যাগা যাগা বলার সময় ১ম যে যাগা আছে তারপর নিয়ত হয়ে যেত যে এই শব্দের দ্বারা তালা* দিলাম ।সন্দেহের কারনে একজনকে ফোন দিলে সে বলেন এ ভাবে বলার দ্বারা ১ তালা* হয়েছে।তার মনের ওয়াস-ওয়াসা থেকে সে আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ভাঙতে শুরু করে।কারন এরকম তো ৩ বারের বেশি হয়েছে ফলে ১ টা করে হলেও তো ৩ টার বেশি হয়ে গেছে।(এর মাঝে আবার এক মুফতি বলে যে দেন মোহরের টাকার পরিমান বৃদ্ধি করেন।তার কথা শুনে ২৫ হাজার টাকা করা হয়)। তারপর এক সময় মুফতি আমীর হামজা হুজুরের যে ফতুয়া গ্রুপের, সে গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি আব্দুল মালেক হুজুরকে ফোন দেয়।তার যাগা যাগা যাগা বিষয়ে কথা বলার পর সে বলে এগুলো ওয়াসওয়াসা।তখন সে ছেলেটা জিজ্ঞাসা করে কি করেন আপনি?তখন ছেলে বলে সে দশম শ্রেণিতে পড়ে।তার মনে কৌতুহল জাগে যে এত অল্প বয়সে বিয়ে কীভাবে করলাম।সে জিজ্ঞাসা করে পরিবারিক ভাবে হয়েছে?তখন তাকে সব বলা হয় যে,উনার ফতুয়া গ্রুপের মুফতি (আমীর হামজা)হুজুরের থেকে সব জেনে শিখে আমরা বিয়ে করি।তখন সে বলেন ইন্নালিল্লাহ।আপনাদের বিয়ে হয় নাই।আপনারা কি শারীরিক সম্পর্ক করেছেন? আমরা তখনও শারীরিক সম্পর্কে জড়াই নাই।আমরা চেয়েছিলাম কলেজ শেষে বাবা মা কে জানিয়ে বিবাহ করে তারপর শারীরিক সম্পর্কে জড়াবো। তখন সে বলে আপনারা দ্রুত আলাদা হয়ে যান ।আপনের দেখা সাক্ষাত বা কথা বলা জয়েজ না কারন আপনাদের বিয়ে হয় নাই।আর বিয়ে না হলে তো তালা* হয় ই নাই।ছেলেটা তাকে কারন জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আপনাদের কুফু ‍মিল নেই ।কুফু মিল ছাড়া বাবার অনুমতি ছাড়া বিবাহ হয় না।ছেলে তাকে বলে তার বাবা কলেজের একজন ইসলমি স্টাডিসের প্রফেসর পাশাপশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।মেয়ের পরিবারের সাথে একে বারেই যায় না এমন না।তখন ছেলেটা কুফু বলতে বুঝতো পারিবারিক সমতা।মেয়ের বাবা একটা মাদ্রাসার পরিচালক ছিলেন এবং একজন কাউন্সিলর ছিলেন ।পাশাপাশি ব্যবসাও করতেন। তাকে এসব বলার পরে ছেলে সে জিজ্ঞাসা করে, আপনি কি ইনকাম করেন? ছেলে বলে যে “না। আমার নিজের কোনো ইনকামের ব্যবস্থা নাই । তবে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে বাবাকে কম্পিউটার দিয়ে সাহায্য করি।”তখন সে বলে ভরন পোষনে অক্ষম ছেলে কোনো মেয়ের ই কুফূ না।মানে যার ভরন পোষনের ক্ষমতা নাই সে একটা কাজের মেয়েরও কুফূ না।ওলী ছাড়া কুফু মিল ছাড়া বিবাহ হয় না।অতএব আপনার বিয়ে হয় নাই।(কিন্তু ছেলেটা তার বাবার কাজে সাহায্য করতো তা থেকে তার বাবা ইনকাম করতো।)। এভাবে ছেলেটা দিন দিন অসুস্থ হতে লাগে।একে তো যাগা যাগা যাগার ফতুয়া নিয়ে সমস্যা।এখন ইনি বলতেছে বিয়েই হয় নাই।তখন যার কথা মতে বিয়ে করা হিইছিল তাকে ফোন দিলে সে বলে যে বিয়ে হয় নাই এ কথা কীভাবে বলে আমি বুঝেতেছি না।তখন তাকে বলি কুফুর ব্যাপারে ।সে বলে বিবাহ হইতে কুফু শর্ত না।কিন্তু সে বলে যে উনি আমার উস্তাদ। আমার জন্মের আগে মুফতি হইছেন তিনি।তিনি আমার উস্তাদ তার কথার বাহিরে আমি কথা বলতে পারবো না। আপনারা আলাদা হয়ে যান।পরে ছেলেটা এমনিতেই ওয়াস-ওয়াসার রোগী।সে পরিস্থিতিতে একেক জন এককে কথা বলতেছিল।তার দুই এক দিনের মাথায় মুফতি আব্দুল মালেক হুজুর ছেলেটাকে ফোন দিয়ে বলে যে বড় হয়ে আপনি মেয়েটাকে বিয়ে করবেন শিওর?ছেলেটা বলে যে তা তো বলতে পারতেছি না ।কারন আমরা মাত্র ১০ম শ্রেণিতে পড়ি।মেয়েকে যদি জোর করে অন্য জায়গায় বিয়ে দেয় ওর বাবা মা তখন তো অমার কিছু করার নাই।তখন মুফতি সাহেব বলেন তাহলে আপনি মেয়েটাকে ১ তালা* দেন যেন আপনাদের বিবাহ হয়ে থাকলেও পরে মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে পারে আবার ১ তালা* দিলে অপনিও ইচ্ছা করলে পরে বিবাহ করতে পারবেন।তখন তাকে বলা হয় বিয়েই যদি না হয় তালা* এর কি দরকার। সে বলে তাহলে আর সন্দেহ থাকলো না। এসব পরিস্থিতিতে ছেলের পড়াশোনা তো দূরের কথা স্বাভাবিক জীবন যাপন করাও সম্ভব হচ্ছিলো না।তাদের এসব কথা শুনে ছেলেটা ১ টা তালা* দেয় কিন্তু ঐ যাগা যাগা এর বিষটা আবার স্মরণ হইলো। তখন সে একদম সব স্পষ্ট করার জন্য রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে জোরে উচ্চ স্বরে যা কানে পৌঁছায় এমন ভাবে বলে যে আমি অমুক কে ৩ তালা* দিলাম।কিন্তু এসব শুনে মেয়ে তো কোনো ভাবে মানতে পারতেছিলো না আর ছেলেও কোনো ভাবেই মানতে পারতেছিলো না।যেখানে আলাদা থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না বলে বিয়ে করার চিন্তা করা হলো সেখানে এই পরিস্থিতি হলো।আজ ১ বছরের বেশি মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতেছি আমরা দুইজন।এর মাঝেই আমরা এস এস সি পরিক্ষা দিয়ে দুজনই এ প্লাস পাই।তবে এ পরিস্থিতিতে এত চাপ নিয়ে ইন্টারে পড়া কীভাবে হবে আল্লাহ ই ভালো জানে।তারপর ঘটাঘাটি করে জানা যায় যদি বিয়ে হয়ে থাকে তবে তালা* হয়েছে।আর বিয়ে না হয়ে থাকলে তালা* হয় নাই।যদি তালাক হয়ে থাকে তাহলে নাকি স্বাভাবিক ভাবে কোথাও বিয়ে হলে সেখানকার স্বামীর সাথে তালা* হলে তবেই নাকি কেবল আগের জন অবার বিয়ে করতে পারবে ।এখন ছেলে এরপরও রাজি।কিন্তু মেয়ের কবে বিয়ে হবে আর কখনও তালা* হবে কি না তারও ঠিক নাই। তবে মেয়ে বলে আমি এই ছেলে ছাড়া কাউকে ভাবতেই পারি না।আমর অন্য জায়গায় বিয়ে হলেও সেখানে বেশি দিন থাকতেই পারবে না।এখন ইচ্ছা করে এমন করলে তো সমস্যা।

আহলে হাদীস বা মোহাম্মদী বা লা-মাযহাবের বড় বড় আলেমের মতে ওলী ছাড়া বিবাহ হয় না।কিন্তু হানাফী মাযহাব অনুযায়ী আমরা বিয়ে করেছিলাম।এখন বিপদে পড়ে ছেলে আহলে হাদীস হয়ে গেলে তো সুবিধাবাদী মুসলমান হয়ে গেল।মোহাম্মদীদের অনুযায়ীও সুবিধাবাদী হওয়া হয়।

মেয়ের ভাই নাই।মেয়েরা তিন বোন।মেয়েই সবার বড়।মেয়ের দাদা-বাবা-চাচা সবাই আহলে হাদীসের লোক।মেয়ের দাদা আহলে হাদীস মসজিদের খাতিব।কিন্তু ছেলের বাপ দাদা ছেলে নিজেও হানাফী মাযহাবের অনুসারী।

প্রশ্নঃ ১।সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতে কুফু,ওলী,মেয়ের মাযহাব,ছেলের মাযহাব বিবেচনায় বিয়ে হয়েছিল কি না?

বিয়ে হয়ে থাকলে তালা* হয়েছে এতে সন্দেহ নাই।

২। শুনেছি কেউ যদি এমন কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করে যার ফলে পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই আর বিয়ে করা যাবে না তার ক্ষেত্রে নাকি কি যেন পিদ্ধতি আছে যে,উকিল হয়ে বা কোনো ভাবি ইশারাতে বিয়ে করা যায় ?

৩।যদি বিয়ে হয়ে থাকে তবে আসমান আর যমীনের মধ্যে মেয়েকে অন্য জায়গায় বিয়ে না দিয়ে কোনো ভাবে বিয়ে করার পদ্ধতি আছে কি?

৪।যদি মেয়ের বিয়ের পর অন্য স্বামীর সংসার করতে কোনো ভাবেই ভালো না লাগে তবে কি আগের ছেলের কাছে আবার আসতে পারবে কি??? আগে থেকে এমন পরিকল্পনা থাকায় মেয়ে যদি অন্য জায়গায় কিছুদিন সংসার করে চলে আসে তবে হিল্লা বিয়ের গুনহা হবে কি?

৫। একজন অপর জন ছাড়া থাকাটা কল্পনার মতো হয়ে আছে এখন করনীয় কী?

Loading

Arab Light Online Madrasa এটি প্রকাশ করেছে অক্টোবর 2, 2023
একটা মন্তব্য যোগ করুন

0 উত্তর

আপনার উত্তর লিখুন।
error: Content is protected !!