BN / EN
593 দেখা হয়েছেঅর্থনীতিচাকুরী ব্যাংক হারাম হালাল
0
0 টি মন্তব্য

আসসালামু আলাইকুম হযরত।

আমার বাবা সোনালী ব্যংকে চাকুরী করেছেন। বর্তমানে অবসরে আছেন। ব্যাংকে চাকুরীর ইনকাম যেহেতু হালাল হয় না, তাই উনার বর্তমান কর্তব্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম।

>>বিস্তারিত বিবরণ:
আমার আম্মা কলেজে শিক্ষকতা করেন। এই বছর অবসরে যাবেন। আমাদের যা সম্পত্তি আছে তা বাবা-মায়ের উভয়ের বেতনের সমন্বয়ে করা হয়েছে। বাবা এবং মায়ের সম্ভাব্য আয়ের অনুপাত ১০:৩ ।আমাদের অন্য কোনো ইনকামের ব্যবস্থা নেই। আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীর খোজ করছি।

আমাদের জমির পরিমান ৮ শতক। ৯৫-৯৬ সালে যখন কেনা হয়েছিল তখন রেজিস্ট্রি খরচ সহ চার লক্ষ টাকার কিছু কম খরচ পড়েছিল। এই টাকার ভেতর দুই লক্ষ টাকা বাবা পান পূর্বের একটি জমি বিক্রি করে(সেটিও আব্বু-আম্মুর বেতনের ৯০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা ছিল)। আর বাকি ২ লক্ষের কিছুটা বেতনের টাকায় আর বেশিরভাগ আত্মীয় এবং বন্ধুদের থেকে ঋণ করেন। জমি কেনার পরে বাড়ি বানানোর লোন পান ব্যাংক থেকে, সেই টাকা দিয়ে আস্তে আস্তে আত্মীয়দের ঋণ পরিশোধ করেন।

বাড়ি বানানোর জন্য পুরো চাকুরীজীবনে উনি কয়েক ধাপে লোন নেন। যার সর্বমোট পরিমান ৪৫ লক্ষ টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসের বেতন থেকে কিছু টাকা কেটে রাখতো। গত ২৫ বছরে বেতন+অবসর ভাতা মিলিয়ে মোট কেটে নিয়েছে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা। জমি কেনার পর অর্ধেক জমিতে বানিয়েছিলেন ২ তলা বাড়ি(খরচ প্রায় ৯ লক্ষ টাকা)। কয়েক বছর পর ৩য় তলার কাজ করেন(খরচ ৯ লক্ষ)। এরপর ৪র্থ তলা (খরচ ২০ লক্ষ)।

প্রশ্ন:
>আমাদের বাসার সামনেই মাদ্রাসা। আমাদের ৪ তলা থেকে ২ তলা যদি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া পার্মানেন্টলি দিয়ে দেয়া হয় তাহলে কি বাকি ২ তলা এবং জমি ব্যবহার করা জায়েজ হবে? (বর্তমানে উক্ত ২ তলার বিক্রয়মূল্য, তৎকালিন পুরো জমির ক্রয়মূল্য এবং পুরো বাড়ি নির্মানমূল্যের চেয়ে বেশি হবে)

>বাড়ি ভাড়া বাবদ এতোদিন যে ইনকাম হয়েছে সেগুলো হালাল নাকি হারাম?

>বাবা মায়ের বেতনের টাকা দিয়ে আরেক স্থানে জমি কেনা হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এখন জমির দাম প্রায় চারগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত জমির এক চতুর্থাংশ বিক্রি করে টাকাটা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া ছদকা করলে বাকি অংশ ব্যবহার করা যাবে?

>আমাদের বাসার এসি, মোটরসাইকেল, মোবাইল, খাট, আলমারি সবকিছুর ক্রয়মূল্য কি সদকা করতে হবে?

>ব্যাংকে এমন কাজও করতে হয়েছে যেখানে সুদের লেনদেন নেই। যেমন: সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনের বিল তৈরি, চালান জমার কাজ, চলতি একাউন্টের লেনদেন, ভল্টের দায়িত্ত্বে থাকাকালিন জেলার সকল ব্যাংকে এবং সোনালী ব্যাংকের শাখাসমূহে টাকা সরবরাহ করা এবং যোগাযোগ রাখা, পেনশন, ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট, পাসপোর্ট, ট্যাক্সের কাজ, আমদানি-রপ্তানির কাগজপত্রের কাজ, লকার ভাড়া, বিদ্যুত পানির বিল জমা, পরীক্ষার ফি জমা, LC খোলা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে উনার পেনশনের সমস্ত টাকা কি সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করতে হবে?

>ব্যাংকের বেতন/পেনশনের টাকা কোন কোন খাতে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করা যায়? শিশু-বৃদ্ধদের কুরআন শিক্ষা কার্যক্রমে খরচ করা যাবে? গরিব আত্মীয়কে দেয়া যাবে? আমার একজন মামা ব্যাংকে চাকুরি করেন, উনি যদি ব্যাংকের চাকুরি ছেড়ে দেন তাহলে তার ব্যবসা শুরু করার জন্য আমার বাবা পেনশনের টাকা দিতে পারবেন?

>আমার বাবা হজ্জ করতে ইচ্ছুক। যদি উনি আত্মীয়দের কারো থেকে টাকা ধার নিয়ে হজ্জ করে এসে ব্যাংকের বেতন/পেনশনের টাকা থেকে ধার পরিশোধ করেন, তাহলে কি তা জায়েজ হবে?

>আমাকে একজন হুজুর বলেছিলেন যে, আমি বালেগ হবার পরে বাবার থেকে যত টাকা নিয়েছি তা ধার হিসেবে নেয়ার নিয়ত রাখা। পরবর্তিতে চাকুরি পেলে পরিশোধ করা। সেক্ষেত্রে পরিশোধ করার সময় কি এটা তাকে জানিয়ে দেয়া জরুরি নাকি তাকে সম্ভাব্য টাকাটা বুঝিয়ে দিলে বা কিছু কিনে দিলেও হবে?

>হারাম সম্পদের মিরাস সাব্যস্থ হয় না বলে শুনেছি। যদি কোনো ব্যাংকার তার সম্পত্তি রেখে মারা যায় তাহলে তার সন্তানদের জন্য পুরো সম্পত্তিই সদকা করে দিতে হবে নাকি শুধু ক্রয়মূল্য?

আরো কোনো পরামর্শ থাকলে জানাবেন দয়া করে। জাযাকুমুল্লাহ খাইর।

Loading

Maulana Torikul Islam প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সেপ্টেম্বর 6, 2023
একটা মন্তব্য যোগ করুন

1 উত্তর

0
  1. ওয়ালাইকুম সালাম জি,

আপনার প্রশ্ন আমরা পেয়েছি তবে আপনি একটা প্রশ্নের মধ্যেই ৯টি কলামের জবাব চেয়েছেন। 

১,২,৩,৪,৫,৯নংকলামের জবাব,

আপনার বাবা ৪৫ লাখ টাকা লোন (সুদ)নিয়ে বাড়ি বানিয়েছে তাই ওই বাড়ি ব্যবহার করা ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়া তার জন্য নাজায়েয। এখন যদি এই বাড়ি থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান, তবে যে পরিমাণ সুদের টাকা উক্ত বাড়ি নির্মাণে খরচ করেছেন (সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সে পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকীনদের মাঝে অথবা মাদরাসার নামে সদকা করে দিলে উক্ত বাড়ির মালিক হয়ে যাবেন।) তখন তা থেকে উপকৃত হওয়া বা ব্যবহার করা জায়েয হবে। সদকা করার আগ পর্যন্ত ঐ সম্পদ হালাল হবে না এবং এর থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়াও বৈধ হবে না। আর পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও তার ভোগব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৫০; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮)

আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। (সূরা বাকারা  ২৭৮-২৭৯)

হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রাযি. বলেন,

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ

‘রাসূলুল্লাহ ﷺ সুদ ভক্ষণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীগণকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, (গুনাহের ক্ষেত্রে) তারা সবাই বরাবর।’ (মুসলিম ১৫৯৮)

৬নংকলামের জবাব,

পেনশনের টাকা সম্পূর্ণ হালাল। এটি আপনার বাবার বেতনের টাকা।

এ টাকা হাতে আসার আগ পর্যন্ত এর উপর আপনার মালিকানা সাব্যস্ত হয় না। বিধায় এই টাকার সাথে সুদের নাম করে অথবা অন্য কোন নাম দিয়ে যা কিছু বর্ধিত করা হবে সবই হালাল।

যদি এমন হতো, এই টাকা আপনি নিজে জমা করতেন, আর সেই আমানতের টাকার উপর সুদ দিত, তবে সুদ হারাম হতো।

অতএব নিঃসন্দেহে এই পেনশনের টাকা এবং এর উপর বর্ধিত অংশ গ্রহণ করে সমস্ত হালাল কাজে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।

Loading

Maulana Torikul Islam প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সেপ্টেম্বর 6, 2023
একটা মন্তব্য যোগ করুন
আপনার উত্তর লিখুন।
error: Content is protected !!