Why you must revert to Islam from Christianity?
Surah 3 Ali ‘Imran, Ayat 85-85
وَمَنۡ يَّبۡتَغِ غَيۡرَ الۡاِسۡلَامِ دِيۡنًا فَلَنۡ يُّقۡبَلَ مِنۡهُ ۚ وَهُوَ فِى الۡاٰخِرَةِ مِنَ الۡخٰسِرِيۡنَ ﴿3:85
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।
Whoever seeks a faith other than Islam, it will never be accepted from him, and he, in the Hereafter, will be among the losers.
সূরা বাক্বারাহ’র এই আয়াতটি নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে এবং এক শ্রেণীর ‘আধুনিক মুসলিম’ এই ধরনের আয়াতকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে অপব্যবহার করেছে পাশ্চাত্যের সমাজের সাথে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে, সেখানকার মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের কাছেই তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য
“পূর্ববর্তী নবীদের ভবিষ্যদ বাণী রসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের ব্যাপারে।”
মহানবী (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মানবতার মুক্তির দিশারি। জ্বিন ও ইনসানের নবী। আরব-অনারবের নবী। সারা বিশ্বের সবার নবী। পূর্ববর্তী সব আসমানি কিতাবে তাঁর আগমনী বার্তা লিপিবদ্ধ ছিল। অনেক নবী-রাসূলও সেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কোনো কোনো নবী তাঁর আগমনের জন্য দোয়াও করেছিলেন। তাঁর অনন্য শ্রেষ্ঠত্বের কারণে ওইসব নবীর অনেকে তাঁর উম্মত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছিলেন, যা বিভিন্ন তাফসির ও সিরাতগ্রন্থে নিখুঁতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
সর্বপ্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেন হজরত আদম (আ.)। তাকে সৃষ্টির সময় আরশে আজিমে লিখিত আল্লাহর নামের সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) এর নামটি দেখতে পান। তিনি নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে যখন দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হন, তখন থেকেই মহান আল্লাহর দরবারে অপরাধ-মার্জনার প্রার্থনা করেছিলেন। তাঁর প্রার্থনা কবুল হচ্ছিল না। অবশেষে সেই (মুহাম্মদ) নামের উসিলায় মাফ চাইলে মহান আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি দুনিয়ায় সবার পরে আবির্ভূত হলেও তাঁর সৃষ্টি সবার আগেই হয়েছে। হজরত আদম (আ.) এর এ ঘটনা থেকে মহানবীর (সা.) আগমনের সুসংবাদ প্রতিভাত হয়। খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি সেই সময়েই নবী হিসাবে মহান আল্লাহর কাছে নির্বাচিত ও মনোনীত ছিলাম যখন আদম (আ.) এর অস্তিত্ব মাটির সঙ্গে একাকার ছিল।
প্রমাণ মেলে হজরত মুসা (আ.) এর ভবিষ্যদ্বাণী থেকেও। তিনি সর্বশেষ রাসূলের উম্মতের এত মর্যাদা দেখে অভিভূত হন। ওই উম্মতের প্রতি আকৃষ্ট ও আসক্ত হয়ে পড়েন। আক্ষেপের স্বরে বলেন, হায়! আমি নবী না হয়ে যদি এই নবীর উম্মত হতে পারতাম। সেই সঙ্গে মুসা (আ.) নিজ জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, তোমাদের জন্য প্রভু তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে আমার মতো একজন নবী প্রেরণ করবেন। তোমরা তাকে মেনে চলবে। প্রভুর কথাই তার মুখ দিয়ে প্রচারিত হবে।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “সেইসব লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রাসূলের, যিনি নিরক্ষর নবী, যার সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়।” (সূরা আরাফ : ১৫৭)।
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন হজরত ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.)ও। মহানবী (সা.) এর আগমনের জন্য তারা উভয়ে দোয়াও করেছিলেন। তিনি ইসমাঈল (আ.) এর বংশধর হবেন এবং মক্কা শরিফে প্রেরিত হবেন। কার্যত তিনি মক্কায় এবং হজরত ইসমাঈল (আ.) এর বংশেই প্রেরিত হয়েছেন। পক্ষান্তরে মহানবী (সা.) হজরত ইবরাহিম (আ.) এর দোয়ার ফসল। তিনি আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে একজন রাসূল পাঠানোর দোয়া করতেন। যিনি পৃথিবীতে মহান আল্লাহর বাণী প্রচার করবেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন। সত্যের ঝান্ডাকে উড্ডীয়ন করবেন। আল্লাহপাক তার দোয়া কবুল করে শেষ নবী (সা.) কে প্রেরণ করলেন।
খোদ নবী করিম (সা.) এ কথার যথার্থতা হাদিস শরিফে ব্যক্ত করেছেন। পবিত্র কাবা শরিফের ভিত্তি উত্তোলনের সময় হজরত ইবরাহিম (আ.) যে তিনটি দোয়া করেছিলেন তন্মধ্যে তৃতীয় দোয়াটি ছিল- পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে আপনার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করবেন, তাদের কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র ও আত্মসংশোধনের পথ দেখাবেন। (সূরা বাকারা : ১২৯)।
হজরত ঈসা (আ.) বিশ্বনবী (সা.) সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি আগাম সুসংবাদ দিয়েছিলেন, তারপর আরেকজন নবী পৃথিবীতে আসবেন। তিনিই হবেন শেষ নবী। তাঁর নামও তিনি বলে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আ.) বলল, হে বনি ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তার নাম আহমদ। (সূরা আসসফ : ৬)।
মহানবী (সা.) বলেন, “আমি ঈসা (আ.) এর সুসংবাদ ও পিতামহ ইবরাহিম (আ.) এর দোয়ার ফসল। আমার মায়ের স্বপ্ন যিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন তার কাছ থেকে যেন একটি নূর বিচ্ছুরিত হয়েছে যা দ্বারা সিরিয়া পর্যন্ত আলোকিত হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.) আল্লাহর দরবারে আকাঙ্ক্ষা পেশ করেছেন শেষ নবীর উম্মত হওয়ার জন্য। আল্লাহ সে আকাঙ্খা পূর্ণ করবেন। তিনি আখেরি জামানায় আগমন করবেন এবং উম্মতে মুহাম্মদির অন্তর্ভুক্ত হবেন। দ্বীন-ইসলামের সাহায্যকারী হবেন, দাজ্জালকে হত্যা করবেন। (তাফসিরে রুহুল মাআনি : ১/৩৮৬)।
শুধু তাই নয়, অন্যান্য সব নবীর কাছ থেকে মহান আল্লাহ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, মুহাম্মদ (সা.) আবির্ভূত হওয়ার পর তারা যেন তাঁর (সা.) প্রতি ঈমান আনে। তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করে এবং তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। আম্বিয়ামে কেরামও তাদের নিজ নিজ উম্মতকে এ কথা জানিয়ে দেন যে, মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর ঈমান আনাই তার আনুগত্য করা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের কাছে কোনো রাসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। (সূরা আলে ইমরান : ৮১)।
আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এর মাঝে অন্য সব নবীর সব গুণের সমাবেশ ঘটেছে, যা অন্য নবীদের ছিল পৃথক পৃথক। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর উম্মতও সর্বোত্তম উম্মত। তাঁর আগমন ও গুণ-মর্যাদার কথা পূর্বেকার আসমানি কিতাব ও নবী-রাসূলদের ভবিষ্যদ্বাণীতে ছিল। খোদ মহানবী (সা.) বলেন, “কেয়ামতের দিন আমার পতাকাতলে সমবেত হবে আদম (আ.) ও তার পরের সব মানুষ।” সুবহানআল্লাহ।
নবী করীম (সঃ) এর আগমনের পূর্বাভাসঃ
*হযরত মুসা ( আঃ) এর পর নতুন ধর্ম নিয়ে কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি। যারা এসেছেন তাদের সবাই তার অনুসারী ছিলেন। দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটে। এ কারণে তাকে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি নন বরং তারই পরবর্তী ব্যক্তি। হযরত মুসা ও হযরত ঈসা (আঃ) তাদের নিজ নিজ কিতাবে যে রাসূলের কথা বলে গেছেন, তা কোরআনের আয়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে-
ইহুদী ও খৃষ্টানরা তার বর্ণনা নিজদের কাছে ( তাওরাত ও ইঞ্জিলে) লিখিত পাচ্ছে “।( সূরা আরাফঃ ১৫৭)
(৩) হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসুল (সঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম আপনার ব্যাপারে প্রথম পূর্বাভাস কি ছিল? উত্তরে নবীজি (সঃ) বলেন-
(ওমা-রাআত উম্মী আন্নাহু খারাজা মিনহা-নূরুন আদ্বোয়া-আত লাহু কুছুরুশশা-মি।) অর্থঃ সেই সপ্ন আমার আম্মা দেখতে পান, এ ক নূর তাঁর শরীর থেকে বের হয়ে শামদেশের প্রসাদ গুলো উদ্ভাসিত করে দিল”। (আল হাদীস )
এতে যে ইশারাই ছিল যে, তাঁর গর্ভের সন্তানের মাধ্যমে যে ধর্ম প্রাচারিত হবে তা দূর দেশ পর্যন্ত প্রসার লাভ করবে। তাই তোঃ পিতা ইব্রাহীমের দোয়া, হযরত ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ এবং মায়ের সপ্ন ছিল আমার ব্যাপারে পূর্বাভাস। আমরা জানতে পারি, প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আবির্ভাবের কথা জানতেন, তাঁর আবির্ভাবের সময় পৃথিবীতে হিন্দু, পার্সী ( অগ্নি উপাসক), বৌদ্ধ, ইহুদী এবং খৃষ্টান ধর্ম প্রচলিত ছিল। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ-পূরাণে, পার্সীদের ধর্মগ্রন্থ যিন্দাবেঁস্তায়,। এবং বৌদ্ধদের ধর্ম গ্রন্থ দিঘানিকায়ায় ও রাসূল (স) এর এবং তার আবির্ভাবের ভবিষৎবাণী করা হয়েছে।
(৪)ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তৌরাত এবং খৃস্টানদের ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিল যে আল্লাহর তরফ হতে অবতীর্ণ হয়েছে, তা পবিত্র কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ কিতাব দু’টির মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর গুণাবলী এবং তাঁর শুভাগমনের ভবিষৎবাণী স্পষ্টাক্ষরে বর্ণিত হয়েছে। ঈহুদী খৃষ্টানরা নিজ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে এ কথা জানতে পেরেছিল।
আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘ যখন তাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের ধর্মগ্রন্থ (তৌরাত)-এর সমর্থনকারী কিতাব পৌছল, অথচ ইতিপূর্বে তারা কাফেরদের (আরব পৌত্তলিকদের) কাছে বর্ণনা ও করত, কিন্তু এখন যখন তাদের জানা-চেনা বস্তু অর্থাৎ কোরআন তাদের কাছে পৌঁছল তখন তারা তা অমান্য করে বসল। সুতরাং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ হউক।’ (সূরা বাকারহ – ৮৯)
হযরত ‘ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) ইহুদী ধর্মের বিজ্ঞ আলেম ছিলেন। পবিত তাওরাত সম্পর্কে তার অসাধারণ জ্ঞান ছিল। তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণ করার পর সালামা এবং মুহাজির নামক তাঁর দু ভাতিজাকে ইসলামের দিকে আহবান করেন। তিনি তাঁদেরকে বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্রদয় তোমরা উভয়ে নিঃসন্দেহভাবে অবগত আছ যে, আল্লাহ তা-আলা পবিত্র তাওরাতে বলেছেনঃ ( ইন্নি বা’ছুম মিন ওয়ালাদি ইসমা-‘ ঈলা নাবিয়্যান ইসমুহু আহমদ মান আ-মানা বিহী ফাক্বাদিহতাদা -ওয়া রাশাদা ওয়ামাল লাম ‘ইউ’মিম বিহী ফাহুয়া মাল’ উনুন ফা আসলামা সালামাতা ওয়া আবা-মুহা জারা।)
অর্থঃ নিশ্চয় আমি হযরত ঈসমাইল( আঃ) এর আওলাদের মধ্য হতে একজন রাসুল প্রেরণ করব, তাঁর নাম আহমদ। যে বক্তি তাঁর প্রতি ঈমান আনবে সে হেদায়েত ও যথার্থ পথ প্রাপ্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি ঈমান আনবে না সে অভিসপ্ত। অনন্তর সালামা ইসলাম গ্রহণ করলেন এবং মুহাজির ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করল।
(বায়নুল কোরআন) এ সম্পর্কেই কোরআনুল করীমে আল্লাহ বলেনঃ
মিল্লাতে ইব্রাহিমী (ইসলাম) হতে শুধু সে ব্যক্তি বিমুখ থাকতে পারে, যে স্বগতভাবেই নির্বোধ। (সূরা বাকারাহ – ১৩০)
ইহুদী ধর্মে অভিজ্ঞ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) বলেছেনঃ তওরাতে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সঃ) -গুণাবলী লিখিত আছে এবং এ কথাও লিখিত আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) কে উনার রওজা মোবারকের পার্স্বে দাফন করা হবে। >>> বাইবেলে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)<<<<
যোহনের বাইবেলে উল্লেখ আছেঃ আর আমি আমার পিতার কাছে নিবেদন করব, এবং তিনি আর এক সহায় বা সমর্থনকারী (ফারাক্লীতিস), তোমাদের দান করবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সাথে থাকেন। ( বাইবেল, যোহন অধ্যায় -১৪) উক্ত বাইবেলে আর ও আছেঃ ‘ কিন্তু সেই সহায় যিনি পবিত্র আত্মা, যাকে পিতা (আল্লাহ) আমার নামে পাঠিয়ে দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদেরকে যা যা বলেছি, সে সকল স্মরণ করিয়ে দিবেন। ‘ ( যোহন অধ্যায় – ১৪,পদ – ২৬) আর ও উল্লেখিত হয়েছে, যাঁকে আমি পিতার (আল্লাহর) হতে তোমাদের নিকট পাঠিয়ে দিবো, সত্যের সেই আত্মা, যিনি পিতার নিকট হতে বের হয়ে আসবেন তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিবেন।’ (যোহন অধ্যায় ১৪) আর ও আছেঃ তথাপি আমি তোমাদেরকে সত্য বলেছি,আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সহায়
(ফারাক্লিত) তোমাদের কাছে আসবে না ; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে আমি তোমাদের নিকটে তাঁকে পাঠিয়ে দিব। আর তিনি এসে পাপ সম্বন্ধে, ধার্মিকতা সম্বন্ধে ও বিচার সম্বন্ধে জগতকে দোষী করবেন। (যোহন অ- ১৪)
তোমাদেরকে বল’বার আমার আর ও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করতে পারবে না। পরন্তু সে সত্যের আত্মা (ফারাক্লিত) যখন তিনি আসবেন তখন তিনি তোমাদেরকে সত্যের সন্ধান দিবেন; কারণ তিনি নিজ হতে কিছু বলবেন না। যা যা শুনবেন তাই বলবেন এবং ভবিষ্যতের ঘটনাও তোমাদেরকে জানাবেন।
( যোহন অ- ১৪) ( আমি একটি কথা যোগ করি বাইবেলে ও নবীর করীম ( সঃ) এলমে গায়েবের কথা বলা হল ভবিষ্যতের ঘটনা জানাবেন ঠিক কিনা?)
বাইবেলে বর্ণিত বাখ্যগুলোতে হযরত ঈসা (আঃ) বার বার সেই নবীর আগমনের সুসংবাদ দিয়েছন। উনাকে তিনি ‘ফারাক্লিত’ (Paraclete) বলে অবিহিত করেছেন। এইসব্দটি ইবরানী অথবা সুরইয়ানী। এই সব্দটির হুব হুব আরবী অনুবাদ মুহাম্মদ অথবা আহমদ অর্থাৎ প্রশংসিত, পরম প্রশংসাকারী অথবা পরম প্রশংসিত। প্রচীন ইউনানী (গ্রীক) ভাষায় এ সব্দটির অনুবাদ করা হয়েছে এই ভাবে ‘পাইরিকিলইউটাস’ এর অর্থ অত্যন্ত প্রশংসাকারী বা প্রশংসিত ( আহমদ)। কিন্তু পরবর্তী খৃষ্টানরা যখন দেখতে পেল যে,এর দ্বারা সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে তখন তারা সব্দটি পরিবর্তন করে ( পাইরক্লিটাস) অর্থাৎ ‘শান্তিদাতা’বানিয়ে নিল। খৃষ্টান পাদ্রী এবং মুসলমান আলিম সমাজের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত এ সব্দটি নিয়ে চলে আসছে তর্কযুদ্ধ : আলিমরা প্রাচীন খৃষ্টাদের লিখত প্রামাণ দ্বারা বহু বার প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, এ শব্দটি ‘পাইরিকিলইউটাস’ অর্থাৎ আহমদ বা মুহাম্মদ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন – ‘যারা ঐ সংবাদবাহক উম্মী নবীর অনুসরণ করে, যাকে তারা নিজেদের নিকট তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখত কথা অনুযায়ী পায়।’ ( সূরা অরাফ-১৫৭)
***********************************
মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমনের পূর্বাভাস বাইবেল থেকে।
বাইবেলে মুহাম্মদ বা আহমদ নামের সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। এছাড়া বাইবেলে আছে যে, হযরত ঈসা মসীহ আকাশে উত্তিত হওয়ার অল্পক্ষণ পূর্বে বলেছেন:
‘আর দেখ আমার পিতা যা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি;কিন্তু যে পর্যন্ত উর্ধ্ব হতে শক্তি পরিহিত না হও,সে পর্যন্ত তোমরা এ নগরে অবস্থান কর।’ (লুক,অধ্যায় ২৪)
বর্ণিত কয়েকটি পঙতির পরেই লুকের বাইবেল শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতিশ্রুত নবীর আবির্ভাবের কোন কথা উল্লেখ নেই। তবে এ কথা সুস্পষ্ট যে,হযরত ঈসা (আ) -এর পরে হযরত মুহাম্মদ (স) ছাড়া আর কোন নবীর আবির্ভাব হয়নি।সুতারাং তিনিই সেই প্রতিশ্রুত নবী।’উর্ধ্ব হতে শক্তি(প্রতিশ্রুত নবীর) প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা এ নগরে অবস্থান কর। এ কথার অর্থ এ নয় যে, তোমরা সেখানে ঘর বসতি কর,বরং এর প্রকৃত মর্ম হচ্ছে এই যে,প্রতিশ্রুত নবীর আগমন পর্যন্ত যেরুযালেমের ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ তোমাদের কেবলা থাকবে। যখন তিনি আসবেন মক্কা মুকাররমার পবিত্র কাবা গৃহকে কেবলা করে ইবাদাত করতে হবে। অবশ্য যখন আল্লাহ আদেশ দান করবেন। এজন্যই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
এখন আপনি মসজিদুল হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে কিতাব, তারা অবশ্যই জানে, এটাই পালন কর্তার পক্ষ থেকে ঠিক। (সূরা বাকারাহ-১৪৪)
ইঞ্জীলে হযরত ইয়াহিয়া (আ) এর আবির্ভাবের বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতিশ্রুত নবীর আর ও একটি ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। হযরত ঈসা এবং হযরত ইয়াহিয়া (আ) একই সময়েয় ছিলেন। অবশ্য হযরত ইয়াহিয়া (আ) হযরত ঈসা (আ) অপেক্ষা বয়সে বড় ছিলেন।
হযরত ইয়াহহিয়া ( আ) কে ইহুদিদের পাঠানো লোকেরা তিনজন নবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল তা বাইবেলের ভাষায় বলা হয়েছে এভাবে-ইহুদীদের কয়েক জন ধর্মযাজক ও লিবীয়কে দিয়ে জেরুজালেম থেকে তার কাছে প্রশ্ন করে পাঠাল, আপনি কে? তখন তিনি উত্তর দিলেন যে, আমি সেই খ্রিস্ট (ঈসা) নই। তারা তাঁকে পুনঃ জিজ্ঞেস করল, তবে কি আপনি হযরত ইয়াহিয়া (আ)? তখন তিনি বললেন, আমি নই । আপনি কি সেই নবী? তিনি উত্তর করলেন, না। তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল,আপনি যদি সেই খ্রিষ্ট (ঈসা) না হন, হযরত ইয়াহহিয়া (আ) না হন, সেই নবীও না হন, তবে বাপ্তাইজ করছেন কেন? যোহন (ইয়াহহিয়া) উত্তরে তাদেরকে বলেন, তবে আমি জলে বাপ্তাইজ করেছি; তোমাদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁকে তোমরা জান না, যিনি আমার পরে আসছেন, আমি তার পাদুকার বন্ধন খুলবার যোগ্য নই। ( যোহন অধ্যায় -১)
এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, তৌরাতের ভবিষৎবাণী অনুযায়ী ঈহুদিরা তিনজন নবীর আবির্ভাবের প্রতীক্ষায় ছিল। দু’জন হলেন হযরত ইয়াহহিয়া (আ) এবং হযরত ঈসা (আ) আর তৃতীয় জনকে সেই নবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এতে প্রমাণিত সত্য যে, ঈহুদী খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায় এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত যে, হযরত ঈসা (আ) পর একজন নবী আসবেন শুধু নবী শব্দ প্রয়োগ করলে তাঁকে বুঝা যাবে। এই তৃতীয় নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যতিত আর কেউ নন? হযরত ঈসার পর একমাত্র তিনিই নবী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। এবং শুধু নবী নামে একমাত্র তিনিই সমগ্র জগতে প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন। মুসলমানরা তাঁকে নবী-রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন এবং খ্রিষ্টানদের মধ্যে তিনি The Prophet বা সেই প্রত্যাশিত নবী নামে পরিচিত। আর হযরত ইহাহহিয়ার পরে যে এক জন নবী আসছেন, তাঁর সম্বন্ধে হযরত ইয়াহহিয়া ( আঃ) বলেন, তিনি তোমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন, তোমারা তাকে জান না, আমি তার পাদুকার বন্ধন খুলবারও যোগ্য নই।
কোনো সন্দেহ নেই, যারা বিশ্বাস করেছে এবং যারা ইহুদী, খ্রিস্টান, সাবিইন — এদের মধ্যে যারা আল্লাহকে এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে, তাদের পুরস্কার তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখও করবে না। [আল-বাক্বারাহ ৬২]
এই আয়াতের অর্থ কি এই যে, আজকে যারা ভালো ইহুদী, ভালো খ্রিস্টান, তারা সবাই জান্নাতে যাবে? তাহলে এত কষ্ট করে ইসলাম মানার কি দরকার? কারো যদি কু’রআনের সালাত, হিজাব, রোযা রাখার আইন পছন্দ না হয়, তাহলে সে কালকে থেকে খ্রিস্টান হয়ে গেলেই তো পারে? সে তখনো আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, শেষ দিনেও বিশ্বাস করবে, এমনকি ভালো কাজও করবে। তখন এই আয়াত অনুসারে “তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখ করবে না।” কী দরকার এত কষ্ট করে, এত নিয়ম মেনে মুসলিম হয়ে থাকার?
প্রথমে কিছু ইতিহাস বলে নেওয়া দরকার—
সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে, ইসলাম একটি নতুন ধর্ম, যা মুহাম্মাদ عليه السلام -ই প্রথম প্রচার করে গেছেন। এটি একটি অসম্পূর্ণ ধারণা। ইসলাম হচ্ছে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বা আল্লাহর একত্ববাদের বিশ্বাস; মহান আল্লাহর تعالى নির্ধারিত সকল মানবজাতির জন্য একমাত্র ধর্ম, যার পুরো বাণী ও বিস্তারিত আইন মহান আল্লাহর تعالى কাছে পূর্ব হতেই সংরক্ষিত। সেই আইন ও বাণীর বিভিন্ন সংস্করণ তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন রাসূলের عليه السلام মাধ্যমে, প্রয়োজন অনুসারে যেটুকু দরকার, সেটুকু পাঠিয়েছেন। সেই বাণী ও সংগ্রহের বিভিন্ন সংস্করণকে কুরআনে সহীফা ও কিতাব বলা হয়েছে। কু’রআন হচ্ছে সেই বাণী বা আইনের সর্বশেষ ও চূড়ান্ত সংস্করণ, বা সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ, যা রাসূল মুহাম্মাদ عليه السلام -এর মাধ্যমে আমরা পেয়েছি।[১]
এছাড়াও আরেকটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো: যারা মুহাম্মাদ عليه السلام এর অনুসারী, শুধুমাত্র তারাই মুসলমান। নবী ইব্রাহিম عليه السلام কা’বা বানানো শেষ করার পরে আল্লাহর تعالى কাছে দু’আ করেছিলেন যেন তার সন্তান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা মুসলিম হয়।[২:১২৭] নবী ইয়াকুব عليه السلام মৃত্যুর সময় তাঁর সন্তানদেরকে বলে গিয়েছিলেন: তারা যেন কেউ অমুসলিম অবস্থায় মৃত্যু বরণ না করে। ‘মুসলিম’ কোনো বিশেষ গোত্র, বংশ, বা বিশেষ নবীর উম্মত নয়। যুগে যুগে যারাই মহান আল্লাহকে تعالى এক ও একক উপাস্য মেনে নিয়ে, নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে, তাঁর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলের عليه السلام অনুসরণ করেছেন, তাঁর নাজিলকৃত কিতাব মেনে চলেছেন— তারাই মুসলিম।।
একই সাথে আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, রাসূল মুহাম্মাদ عليه السلام -এর জন্মের অনেক আগে থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল পাওয়া যায়, সেগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এবং বিকৃতি করা হয়েছে, যার কারণে সেগুলো আর মৌলিক, অবিকৃত অবস্থায় থাকেনি। ফলে আমরা কেবল সেগুলোর ব্যাপারে মৌলিকভাবে ঐশী গ্রন্থ হওয়ায় বিশ্বাস করব, তবে সেগুলো পড়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। কু’রআনের ভাষা এবং আজকালকার তাওরাত, ইঞ্জিলের ভাষার মধ্যে এতই আকাশ পাতাল পার্থক্য যে, সেগুলো পড়লেই বোঝা যায়: প্রচলিত এই তিন ধর্মগ্রন্থের উৎস একই মহান সত্তা নন।
আজকের তাওরাত এবং ইঞ্জিলে আল্লাহর تعالى সম্পর্কে অনেক বিকৃত ধারণা রয়েছে। যেমন, মানুষকে সৃষ্টি করে তাঁর ‘অন্তরে’ বেদনা হওয়ার কথা[১২০], তাঁর নবী ইয়াকুবের عليه السلام সাথে কুস্তি লড়ে হেরে যাওয়ার ঘটনা[১১৯] ইত্যাদি — اَللّٰهُ أَكْبَر! এমনকি নবীদের عليه السلام সম্পর্কে নানা ধরনের অশ্লীল, যৌনতার রগরগে ঘটনা রয়েছে।[১২১] পুরুষদের মাথায় যত নোংরা ফ্যান্টাসি আছে, তার সব আপনি বাইবেলে পাবেন, কিছুই বাকি নেই। বাইবেলের গ্রন্থগুলো পুরো মাত্রায় পর্ণগ্রাফি। আপনি কখনই বাইবেলের বইগুলো আপনার ছোট বাচ্চাদের সাথে বা কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে বসে পড়তে পারবেন না। একারণে মুসলিমরা কোনো ভাবেই বিশ্বাস করে না যে, তাওরাত এবং ইঞ্জিল কোনোভাবেই অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এনিয়ে বাকারাহ ৪-৫ আয়াতের বর্ণনায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বাইবেলের বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা পড়ে অনেক খ্রিস্টান মিনিস্টার, পাদ্রী, বিশপরাও খ্রিস্টান ধর্ম ছেড়ে অন্য কোনো সত্য ধর্ম খুঁজতে গিয়ে ইসলামকে খুঁজে পেয়ে মুসলিম হয়ে গেছেন।[১১৬] এমনকি একজন আর্চ-বিশপ খ্রিস্টান ধর্মীয় শিক্ষায় ব্যাচেলর্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ডক্টরেট করতে গিয়ে মুসলিম হয়ে গেছেন![১১৮] তার মুসলিম হওয়ার ঘটনাটা অদ্ভুত[১১৮]—
তিনি খ্রিস্টান ধর্মে ব্যাচেলর্স এবং মাস্টার্স করার সময় পর্যন্ত খ্রিস্টান ধর্মের কোনো শিক্ষা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতেন না। কিন্তু তিনি যখন ডক্টরেট করা শুরু করলেন, তখন কিছু একটা হলো। তিনি খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার মধ্যে অনেক আপত্তিকর ব্যাপার আবিষ্কার করেন, ধর্ম নিয়ে নানা প্রশ্ন করা শুরু করলেন। এভাবে গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি একদিন কু’রআন নিয়ে বসলেন দেখার জন্য যে, ইসলাম যে নিজেকে সত্য ধর্ম বলে দাবি করে, সেই দাবির ভিত্তি কী? তিনি কু’রআন খুলে এই আয়াতগুলো পড়ে বিরাট ধাক্কা খেলেন—
বল, তিনিই আল্লাহ্, অদ্বিতীয়! অমুখাপেক্ষী, সবকিছু তাঁর উপর নির্ভরশীল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই! [সুরা ইখলাস]
তার পুরো জগত পাল্টে গেল। এরপর তিনি অনেক গবেষণা করে আবিষ্কার করলেন যে, কু’রআন হচ্ছে একমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ যেটাতে কোনো বিকৃতি হয়নি। তিনি তার ডক্টরাল থিসিস শেষ করার সময় ভাবলেন, “ওরা আমাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিক বা না দিক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি সত্য খুঁজছিলাম এবং এটাই হচ্ছে প্রকৃত সত্য।” তারপর তিনি তার খ্রিস্টান প্রফেসর ভ্যান বার্গার-এর সাথে দেখা করতে গেলেন। তিনি দরজা বন্ধ করে তাকে জিজ্ঞেস করলেন:
“পৃথিবীতে যে এত ধর্ম আছে, এর মধ্যে কোনটা সত্য ধর্ম?”
প্রফেসর উত্তর দিলেন, “ইসলাম।”
“তাহলে আপনি মুসলিম হচ্ছেন না কেন?”
প্রফেসর বললেন, “প্রথমত, আমি আরবদের ঘৃণা করি। দ্বিতীয়ত, তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না আমি কত আরেম, আয়েস, সম্মানের মধ্যে আছি? ইসলামের জন্য আমি এগুলো সব ছেড়ে দিব?”[১১৮]
আজকের যুগে যারা ইহুদী এবং খ্রিস্টান, যারা এই ধরনের বিকৃত ধর্মীয় গ্রন্থের অনুসারী, তাদেরকে আল্লাহ تعالى জান্নাতের নিশ্চয়তা দেননি। এই আয়াতের বাণী সঠিকভাবে বুঝতে হলে এই আয়াতকে ভাসা ভাসা ভাবে, প্রেক্ষাপট ছাড়া, কু’রআনের অন্যান্য আয়াতকে বাদ দিয়ে পড়লে হবে না। যারা তা করে, তারা ভুল সিদ্ধান্তে চলে যায়।
তবে আমাদেরকে তিনটি ব্যাপার অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেন আমরা ইহুদী, খ্রিস্টানদের সাথে এমন দুর্ব্যবহার না করি, এমন কটু সম্পর্ক না রাখি, যেটা ইসলাম সমর্থন করে না—
১) প্রথমত, এটা মানা যে: আজকে যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও আল্লাহর تعالى বাণী রয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। আমেরিকার কোনো এক পাদ্রী তার দলবল নিয়ে প্রতি বছর কু’রআন পোড়ায় দেখে[১১৭], আমরাও তার মতো বাইবেল পুড়িয়ে দেখিয়ে দেব না যে, আমরাও মুসলিমের বাচ্চা। আমরা সকল ধর্মের বইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি। কিছু পথভ্রষ্ট খ্রিষ্টান কু’রআন পুড়িয়ে নিচে নামতে পারে, কিন্তু তাই বলে আমরা বাইবেল পুড়িয়ে তাদের মতো নিচে নামব না।
২) আমাদেরকে এটা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা যা-ই করছে সেটাই ভুল না। তাদের বিশ্বাস ভুল হতে পারে, তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস না করতে পারেন, বা মুহাম্মাদকে عليه السلام রাসূল হিসেবে বিশ্বাস না করতে পারেন। তবে তাদের পার্থিব সকল কাজই ভুল নয়। তাই আমরা তাদের প্রতি কোনো ঘৃণা দেখাব না। মনে করব না যে, তারা সব ভুল পথে আছে এবং তারা যা করে তার কোনো কিছুই ঠিক নয়। আমরা মুসলিম। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান জাতি। পৃথিবীতে আরও ৫০০ কোটি মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ تعالى ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সৌভাগ্য দেননি। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের খ্রিষ্টান এবং ইহুদি ভাই বোনেরা কিছু প্রতারকের পাল্লায় পড়ে ভুল রাস্তায় চলে গেছে। আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে ডাক দিয়ে এনে, ভালো করে বুঝিয়ে শুনিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা। ভালো করে বোঝানোর পরেও তারা যদি না আসে, তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা কোনোভাবেই তাদের উপর জবরদস্তি করতে পারব না। আল্লাহই তাদের বিচার করবেন।
এই আয়াতে আল্লাহ تعالى বলছেন, “এদের মধ্যে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে …।” এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা কি?
খ্রিস্টানরা তাদের ‘আল্লাহর’ যে সংজ্ঞা দিয়েছে তা হলো: তিনি তিন রূপে থাকেন: পিতা ঈশ্বর, পবিত্র আত্মা এবং প্রভু যিশু — তিনি কি কু’রআনের বাণী অনুসারে আল্লাহ تعالى?
যে সব লোক বলে, “আল্লাহ হচ্ছেন তিনটি সত্তার তৃতীয়টি” — তারা অবিশ্বাস করে। প্রভু শুধুমাত্র একজনই। তারা যদি একথা বলতেই থাকে, তাহলে তাদের উপরে এক অত্যন্ত যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আঘাত করবে। [আল-মায়িদাহ ৭৩]
আপনি যদি একজন খ্রিস্টান পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, আপনি আল্লাহতে বিশ্বাস করেন?” সে বলবে, “অবশ্যই, তিনি মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা, সর্বোচ্চ প্রভু। তিনি নিরাকার, সর্বশক্তিমান।” কিন্তু তারপরেই সে বলবে, “তার সন্তান যিশু আমাদের প্রভু। তিনি ক্রসে প্রাণ দিয়ে আমাদের সকল পাপ মোচন করে গেছেন। আমরা এখন নিষ্পাপ।”
যে সব লোক বলে যে, “আল্লাহ হচ্ছেন ঈসা মাসিহ, মরিয়মের পুত্র” — তারা আল্লাহতে অবিশ্বাস করেছে।… [আল-মায়িদাহ ৭২, আংশিক]
তাদের সেই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ تعالى নন। সেই সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করলে আল্লাহতে تعالى বিশ্বাস করা হয় না। আল্লাহর تعالى একমাত্র গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দেওয়া আছে কু’রআনে।
একইভাবে, আপনি যদি একজন ইহুদীকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, আপনি কি শেষ বিচার দিনে বিশ্বাস করেন?” সে বলবে, “অবশ্যই। শেষ বিচার দিনে ইহুদীরা সবাই স্বর্গে যাবে, নবী নূহ عليه السلام এর ৭টি আইন যারা মানবে, তারা স্বর্গ পেতে পারে। আর বাকি সবাই নরকে যাবে।”[১১৫] তাদের সেই শেষ দিন, এবং আমাদের শেষ দিনের ঘটনার মধ্যে বিরাট পার্থক্য আছে।
এই আয়াতে একটি বিশেষ গোত্র ‘সাবিইন’দের কথা বলা হয়েছে। এরা হলো আরবে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য গোত্র যারা ওই সব আরব মুশরিক ছিল না, যাদের মূর্তি পুজার কথা কু’রআনে বিস্তারিত বলা আছে।[১][২] তারা এক পরম সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করত, আবার একই সাথে নক্ষত্র পূজা করত। তাদের ধর্ম ইসলাম ছিল না। ধারণা করা হয় তারা নবী নুহ عليه السلام এর শিক্ষা ধরে রেখেছিল। তাদের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।[৪][১০][১১] তবে এই সাবিইন, আর বাইবেলের সাবিনরা এক নয়।
তাহলে প্রশ্ন আসে, এই আয়াত যদি ইহুদী, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য একেশ্বরবাদীদের আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের নিশ্চয়তা না দেয়, তাহলে এই আয়াতের বাণীটা আসলে কী?
ইহুদীরা মনে করে: তারা বেহেশতে যাবেই, আল্লাহর সাথে তাদের এক বিশেষ চুক্তি আছে, কারণ তারা হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত একমাত্র সঠিক ধর্মের বাহক।[৩][২][৮] তাদের এই ধারণাকে এই আয়াতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতটি বনী ইসরাইলকে নিয়ে বলা কয়েকটি ধারাবাহিক আয়াতের মধ্যে একটি। প্রেক্ষাপট অনুসারে এই আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে: ইহুদীদের নিজেদেরকে ভিআইপি দাবি করাটা যে হাস্যকর, সেটা তুলে ধরা।[৩][২][৮] এখানে আল্লাহ تعالى তাদের এই অহংকারের জবাবে যেন বলছেন, “তোমরা মনে করো তোমরা হচ্ছ ভিআইপি? যে-ই আমাকে বিশ্বাস করবে, সে ইহুদী হোক, খ্রিস্টান হোক আর সাবিইন হোক, তাকেই আমি পুরস্কার দিব। তাদের কোনো ভয় নেই, তারা কোনো দুখও করেবে না।”
এছাড়াও এই আয়াতটি রাসূল মুহাম্মাদের عليه السلام সময়ে যারা ইহুদী, খ্রিস্টান, সাবিইন ছিল, তাদেরকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, তারা এ পর্যন্ত যত ভালো কাজ করেছে আল্লাহ এবং শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রেখে, সেগুলো সব আল্লাহ গুনে রেখেছেন। সেগুলোর পুরস্কার তারা পাবে, কোনো দুশ্চিন্তা নেই — যদি এবার মুসলিম হন। একই সাথে অতীতে যারা চলে গেছেন, নিজ নিজ যুগে যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস উপস্থাপন করেছেন, তারাও পুরস্কার পাবেন, তাদেরও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।[২][৪] এবার আল্লাহর تعالى কাছ থেকে নতুন বাণী এসেছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই নতুন বাণী গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে যাওয়া।[৪]
এই আয়াতে তৃতীয় শর্ত হলো: “যারা ভালো কাজ করে।” প্রশ্ন হলো, কে নির্ধারণ করছে কোন কাজটা ভালো, আর কোন কাজটা খারাপ?
আপনি যদি কোনো অফিসের একজন কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেন, “ভাই, আপনি কি একজন ভালো কর্মচারী?” সে বলবে, “অবশ্যই! আমার চেয়ে নিষ্ঠার সাথে এই অফিসে আর কে কাজ করে? এই বছর আমার প্রমোশন না হলে আর কার হবে ভাই?” কিন্তু আপনি যদি তার বস্কে জিজ্ঞেস করেন তার ব্যাপারে, সে বলবে, “আরে ওই ফাঁকিবাজটাকে আমি আগামী মাসেই বের করে দেব। যথেষ্ট সহ্য করেছি।”
কোন কাজটা ভালো আর কোনটা খারাপ — সেটার মানদণ্ড হচ্ছে কু’রআন। যে কু’রআনের সংজ্ঞা অনুসারে ভালো কাজ করবে, তার কোনো ভয় নেই। তার পুরস্কার আছে আল্লাহর কাছে। আর যে অন্য কোনো ধর্মীয় বই অনুসারে ভালো কাজ করবে, সেটা যদি কু’রআনের ভালো কাজের সংজ্ঞার বিরুদ্ধে যায়, তাহলে সেটা আর আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য ভালো কাজ নয়।
এখানে একটি প্রশ্ন আসে: এই আয়াত বলছে শুধু আল্লাহ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করলেই হবে। তাহলে কি আমাদের রাসূল মুহাম্মাদের عليه السلام উপর বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই?
উত্তর সোজা: “এই আয়াতটা আমাদেরকে কে দিয়েছে?” কু’রআন তো বই আকারে আকাশ থেকে পৃথিবীতে এসে পড়েনি। মানুষ কার মুখ থেকে এই আয়াত শুনেছে? যার মুখ থেকে শুনেছে, তাকে যদি তারা রাসূল না মানে, তাহলে তারা এই আয়াতকে আল্লাহর تعالى বাণী হিসেবে মানবে কেন? যদি কেউ এই আয়াতকে আল্লাহর تعالى বাণী হিসেবে মেনেই নেয়, তাহলে তো সে এই আয়াতের বাহককে আল্লাহর تعالى রাসূল হিসেবেই মেনে নিল! সে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাসূল মুহাম্মাদের عليه السلام উপর বিশ্বাস করে ফেলল।
ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি বিশ্বাসের (আল্লাহ تعالى, ফিরিশতাগণ, কিতাবসমূহ, নবী-রাসূলবৃন্দ عليه السلام, শেষ দিন, তাকদীর) মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো: শেষ দিনের উপর বিশ্বাস। প্রাচীন আরব মুশরিকসহ বর্তমানকালের অন্য ধর্মের অনুসারীদের অনেকেই শেষ দিন ছাড়া বাকীগুলোর ব্যাপারে কোনো না কোনোভাবে বিশ্বাস করেন। কিন্তু শেষ দিনকে বিশ্বাস করেন না। শেষ দিন মৃত্যু দিয়ে শুরু। এরপর কবর, কবরের শাস্তি বা শান্তি, পুনরুত্থান, হাশর বা জমায়েত, হিসাব, ফলাফল প্রদান, সীরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম — এসব বিশ্বাসই ইয়াওমুল আখির বা শেষ দিন শিরোনামে বুঝানো হয়। এই বিশ্বাসটি কঠিন হওয়ায়, আল্লাহ عليه السلام কু’রআনে সবচেয়ে বেশি বার এই বিশ্বাসের কথা বলেছেন, এর সপক্ষে যুক্তি, দলীল ইত্যাদি উপস্থাপন করেছেন, বিরোধীদের জবাব দিয়েছেন। এই আয়াতে ‘আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস’ — এভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমে বুঝা যায়, যারা আল্লাহকে تعالى বিশ্বাস করেন, তবে শেষ দিনকে বিশ্বাস করেন না, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকেই تعالى বিশ্বাস করেন না।
আল-বাক্বারাহ’র ২ এবং ৩ আয়াত আমাদেরকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে আমাদেরকে কী কী ব্যাপারে বিশ্বাস করতে হবে, যদি আমরা নিজেদেরকে ‘বিশ্বাসী’ বলে দাবি করতে চাই। এই আয়াতের উদ্দেশ্য নয় ‘বিশ্বাসী’ হবার শর্তগুলো পুনরায় নির্ধারণ করে দেওয়া বা শর্তগুলোতে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া।[৪][৩]
এর পরেও যদি কারো সন্দেহ থাকে, তাহলে তার জন্য এই আয়াতটি যথেষ্ট—
যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুকে ধর্ম হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করে, সেটা তার কাছ থেকে কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না। সে আখিরাতে সর্বহারাদের একজন হয়ে যাবে। [আল-ইমরান ৩:৮৫]
সবশেষে, আল-বাক্বারাহ’র এই আয়াতে একটি অসাধারণ প্রজ্ঞার ব্যাপার রয়েছে। “যারা আল্লাহকে এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে” — কেউ যদি আল্লাহতে تعالى বিশ্বাস রাখে, তাহলে তাকে শেষ দিনে বিশ্বাস করতেই হবে।[১] আপনি যখন মানুষকে জিজ্ঞেস করতে দেখেন, “আল্লাহ কেন আমাকে এত কষ্টের জীবন দিল, যেখানে অন্যরা কত শান্তিতে আছে? আমি কি বলেছিলাম আমাকে এত কষ্ট দিতে? আল্লাহ আমাকে মেয়ে বানাল কেন, আমিতো মেয়ে হতে চাইনি? আল্লাহ আমাকে কালো কিন্তু অন্যদেরকে ফর্সা বানাল কেন, এটা তো ঠিক হলো না? আমি খাট কেন, লম্বা না কেন? আমার কপালে এরকম খারাপ স্বামী পড়ল কেন? আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কোনোদিন ঘুষ খাইনি, কিন্তু তারপরেও আমার ক্যান্সার হলো কেন? সত্যিই যদি আল্লাহ থাকে তাহলে পৃথিবীতে এত দুঃখ-কষ্ট কেন? মুসলিমরা কেন আজকে সবচেয়ে দুর্বল, পশ্চাদপদ, নিপীড়িত জাতি?”
এই ধরনের প্রশ্ন যারা করে, তারা আসলে শেষ দিনে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। কেউ যদি শেষ দিনে গভীরভাবে বিশ্বাস করত, তাহলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বাস করত: আল্লাহ تعالى হচ্ছেন পরম ন্যায় বিচারক এবং শেষ বিচার দিনে তিনি এইসবের বিচার করবেন।[১] প্রতিটি মানুষ তার শারিরিক, মানসিক দুর্বলতা এবং জীবনে নানা সমস্যা, ক্ষতির জন্য আল্লাহর কাছ থেকে যথাযথ প্রতিদান পাবে। যাদেরকে আল্লাহ تعالى ভালো রেখেছেন, অনেক দিয়েছেন, এবং যারা দুনিয়াতে অনেক অন্যায় করেছে: কিয়ামতের দিন তাদের হিসাব হবে ভয়ংকর। এভাবে কু’রআনে দেওয়া আল্লাহর تعالى সংজ্ঞা অনুসারে তাঁর ন্যায়বিচারে সঠিকভাবে, গভীরভাবে বিশ্বাস করলে একজন মুসলিম শেষ দিনে বিশ্বাস করবেই।
একইভাবে আয়াতের পরের অংশটুকু: “শেষ দিনে বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে” — কেউ যদি শেষ দিনে বিশ্বাস করে, তাহলে সে নিজের দুনিয়ার স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যের জন্য ভালো কাজ করবে। যদি বিশ্বাস না করে, তাহলে আর ভালো কাজ করে লাভ কী? আমি যদি শেষ দিনে বিশ্বাস না করি, তাহলে আমি কেন খামোখা কোনো গরিবকে আমার কষ্টের টাকা দান করতে যাব, বা আমার মূল্যবান সময় খরচ করে এই আর্টিকেলগুলো লিখতে যাব, যেখানে আমি সারাদিন ঘরে বসে বিনোদন করতে পারতাম, আমার সব সম্পদ আমি নিজেই ভোগ করতে পারতাম? অন্যের উপকার করে হয়ত আমি কিছু আনন্দ পেতে পারি, কিন্তু শেষ বিচার দিন বলে যদি কিছু না থাকে, তাহলে নিজের সময় এবং সম্পদ এভাবে উড়িয়ে দেওয়াটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বরং এই দুনিয়ার জীবনটাই যেহেতু শেষ, তাই যত পারি আনন্দ-ফুর্তি করে নিব।
কেউ যদি শেষ দিনে বিশ্বাস না করে, তার মানে সে বিশ্বাস করে না যে, তার ভালো কাজের কোনো প্রতিদান সে কখনো পাবে। যদি ভালো কাজের প্রতিদান কোনোদিন না-ই পাই, তাহলে ভালো কাজ করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? একারণেই কেউ যদি ভালো কাজ না করে, সে আসলে শেষ বিচার দিনে বিশ্বাস করে না। আর যে শেষ বিচার দিনে বিশ্বাস করে না, সে আসলে আল্লাহকে تعالى বিশ্বাস করে না। সে হয়তো কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুসারে মেনে নিতে পারে যে, এই মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে, কিন্তু তার বিশ্বাস এই পর্যন্তই। সেই সৃষ্টিকর্তা যে তার প্রভু, তিনি যে তার কাজের হিসাব নেবেন: তার অপকর্মের বিচার করবেন, তার ভালো কাজের পুরস্কার দেবেন — এটা সে বিশ্বাস করবে না।
আজকাল অনেক আধুনিক মুসলিমের মনে প্রশ্ন আসে, “আজকে পৃথিবীতে যে আরও ৫ বিলিয়ন অন্য ধর্মের মানুষ আছে, তাদের কী হবে? তারা কি সব জাহান্নামে যাবে? এটা কোনো কথা হলো? আল্লাহ تعالى কোটি কোটি মানুষ বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠাবে জাহান্নামে ভরার জন্য? এ কেমন পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার ধারণা হলো!” অনেকে এ নিয়ে এমন বিভ্রান্তিতে পড়ে যান যে, শেষ পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম মানাই ছেড়ে দেন।
প্রথমত, যারা অন্যের জান্নাত-জাহান্নামে যাওয়ার নিয়ে এতটাই চিন্তিত, তারা কি নিশ্চিত যে, তারা জান্নাতে যাওয়ার জন্য আল্লাহর تعالى কাছ থেকে ভিআইপি পাস পেয়ে গেছে? পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ জান্নাতে যাবে কিনা — এ নিয়ে চিন্তা করার সময় যদি তার থাকে, তাহলে কি সেই সময়টা নিজের জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়াতে খরচ করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ تعالى কাকে জান্নাতে পাঠাবেন আর কাকে জাহান্নামে, সেটা পুরোপুরি তাঁর ইচ্ছা। তিনি কখনো তাঁর কোনো কাজের ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হন না।[সূরা আম্বিয়া: ২৩] কাজেই তাঁর ইচ্ছাকে কোনো প্রশ্ন না করে মেনে নেওয়াটাই একজন মু’মিনের প্রকৃত পরীক্ষা।
তৃতীয়ত, কু’রআনে কমপক্ষে তিনটি আয়াতে: আল-মূলক ৮-৯, আয-যুমার ৭১, ফাতির ৩৭ — আল্লাহ تعالى আমাদেরকে বলেছেন যে, যতক্ষণ না কাউকে তিনি তাঁর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়ে সাবধান করে না দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে না।[১০] যদি কেউ আল্লাহর تعالى সত্য বাণী বোঝার পরেও অস্বীকার করে, তখন সে কাফির হয়ে যায়, এবং তখনই শুধুমাত্র সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হয়।[১৪৫]
কিন্তু কাউকে যদি ইসলামের বাণী পৌঁছে দেওয়া না হয়, ইসলাম কী — সেটা সে কখনো উপলব্ধি করে না থাকে, তাহলে তার উপর حجة (হুজ্জা) বা দলিল-যুক্তি উপস্থাপিত হয়নি। কিয়ামতের দিন আল্লাহ تعالى তাদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যাপার। তাদের ব্যাপারে ফুকাহাদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, তারা সবাই কাফির এবং জাহান্নামেই যাবে। কেউ বলেছেন তারা আহলুল ফাতরাহ বা সে সময়কালীন মানুষের মতো, যাদের কাছে কোনো নবী-রাসূল আসেননি। তাদের ব্যাপারে হাদীসের বক্তব্য হলো, কিয়ামতের দিন তাদেরকে আল্লাহ পরীক্ষা করবেন। এবং সে পরীক্ষার ফল অনুসারে তাদের জন্য জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। [১৪৬]
বাকি থাকল: আমরা তাদেরকে কাফির বলে দূরে সরিয়ে দেব, না বন্ধুর মতো কাছে টেনে দাওয়াহ দেব? সব সাহাবীই এক সময় কাফির ছিলেন, পরে মু’মিন হয়েছেন। রাসূলের عليه السلام ব্যবহার, দাওয়াহ তাঁদের মুগ্ধ করেছে। আমরা কখনোই দাওয়াহর সময় তাদেরকে ঘৃণাভরে সম্বোধন করব না। কাফির কোনো গালি বা ঘৃণা বোঝানোর শব্দ নয়। আমাদের কাজ হলো পৃথিবীর মানুষকে মহাসত্যের কথা জানানো, আল্লাহর পথে আহ্বান করা। এরপর তাদের অন্তর পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ আল্লাহর تعالى ইচ্ছা।
আমাদেরকে এটা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ تعالى হচ্ছেন আর-রাহমান (পরম দয়ালু) এবং আর-রাহিম (নিরন্তর দয়ালু); তাঁর এই দুটি গুণের যে কত সুন্দর পটভূমি এবং ব্যাখ্যা রয়েছে, তা জানতে সূরা ফাতিহার উপর আলোচনা পড়ে দেখুন।
এই আয়াতে আল্লাহর تعالى শব্দ চয়ন খুব সুন্দর। তিনি বলেননি مَعَ رَبِّهِمْ বরং তিনি বলেছেন عِندَ رَبِّهِمْ। আরবিতে ‘কাছে রয়েছে’ বোঝানোর জন্য দুটো শব্দ রয়েছে مَعَ মা’আ এবং عِندَ ই’ন্দা। মা’আ ব্যবহার করা হয় বোঝানোর জন্য যে, কোনো কিছু অন্য কিছুর সাথে কোথাও রয়েছে।[১১] কিন্তু ই’ন্দা ব্যবহার করা হয় বোঝানোর জন্য যে, কোনো কিছু অন্য কিছুর সাথে যেখানে থাকা যথাযথ, ঠিক সেখানেই রয়েছে।[১১] যেমন, আমরা যদি বলি: ছাত্রটি প্রধান শিক্ষকের সাথে কোথাও রয়েছে — সেক্ষেত্রে মা’আ ব্যবহার করব, কারণ ছাত্রটি হয়ত প্রধান শিক্ষকের সাথে রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিচ্ছে।[১১] কিন্তু যদি বলি: ছাত্রটি প্রধান শিক্ষকের সাথে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে রয়েছে — তাহলে ই’ন্দা, কারণ সেখানে প্রধান শিক্ষক তার যথাযথরূপে রয়েছেন। এই আয়াতে আল্লাহ تعالى সুন্দর করে বলেছেন: তাদের জন্য যে শুধু পুরস্কার রয়েছে তা-ই নয়, সেই পুরস্কার রয়েছে একদম যথাযথ জায়গায়: আল্লাহর تعالى নিজের কাছে।[১১] এছাড়াও এই আয়াতে তিনি বিশেষভাবে বলেছেন, “তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে।” তিনি বলেননি “আল্লাহর কাছে রয়েছে” বা “তোমার প্রভুর কাছে রয়েছে।” তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেছেন যে, তিনি তাদেরও প্রভু।
এখন প্রশ্ন আসে, “যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছে নি, যদি তাদের জাহান্নামে যাওয়াটা অনিশ্চিতই হয়, তাহলে আমাদের কষ্ট করে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কী দরকার? কী দরকার এত সময়-সম্পদ খরচ করে তাদেরকে মুসলিম বানানোর চেষ্টা করার?”
মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কাজে আমাদের সামান্যও ঢিলে দেওয়া যাবে না, কারণ মুসলিম হিসেবে আমাদের উপরে একটা গুরুদায়িত্ব আল্লাহ تعالى দিয়েছেন: তাঁর সত্য বাণীকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে আমাদের ভবিষ্যৎ হবে ভয়ংকর। আমরা দুনিয়াতেও পর্যুদস্ত হবো, আখিরাতেও ভয়ংকর শাস্তি পাবো। এর জন্য আমাদেরকে সংঘবদ্ধ হয়ে যথাযথ ইসলামিক দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে, এবং তাদের মাধ্যমে ইসলামের বাণীকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দিতে হবে।[১১] একইসাথে মনে-প্রাণে চেষ্টার পাশাপাশি সবসময় তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। কারণ হেদায়াত দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ تعالى। আমাদের কাজ কেবল চেষ্টা করে যাওয়া।
ওরাই শেষ পর্যন্ত সফল হবে – বাকারাহ ৪-৫
সূরা বাকারাহ ৪ নম্বর আয়াতটি নিয়ে আধুনিক মুসলিমদের মধ্যে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে—
যারা তোমার (মুহাম্মাদ) উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, যারা পরকালে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।[বাকারাহ-৪]
প্রশ্ন আসে, কেন আমাদেরকে কু’রআনের পাশাপাশি আগে যে কিতাবগুলো নাজিল হয়েছিল সেগুলোতে বিশ্বাস করতে হবে? −এর মানে কি আমাদের তাওরাত, জাবুর, ইনজিল এগুলো সব পড়তে হবে? আমাদের কি ইহুদিদের মতো তাওরাতে যা আছে সেটা মানতে হবে? খ্রিষ্টানদের মতো গস্পেলে যা আছে সেগুলো মানতে হবে? আজকে যারা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান, তারা কি তাহলে আল্লাহর تعالى দেওয়া ধর্মের উপর আছে এবং তাদের কি কু’রআন মানার কোনো প্রয়োজন নেই? তারা কি মুসলিমদের মতোই জান্নাতে চলে যাবে?
কেন আল্লাহ تعالى একবারে মানুষকে কু’রআন না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ দিলেন? একবারে আদম (আ) কে কু’রআন দিয়ে পাঠালে কি সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেত না? আমরা কি তাহলে সবাই এক ধর্মের অনুসারী হয়ে মারামারি বন্ধ করে শান্তিতে থাকতে পারতাম না?
প্রথমে একটা মজার ব্যাপার বলে নেই। দেখুন এখানে বলা আছে, “যারা বিশ্বাস করে তাতে, যা তোমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তোমার আগে অবতীর্ণ হয়েছে।” এখানে কোথাও বলা নেই: “যা তোমার পরে অবতীর্ণ হবে” বা “যা তোমার পাশাপাশি আরেকজনের উপর অবতীর্ণ হবে।” এর মানে দাঁড়ায়: যে সব আহমাদিয়া/কাদিয়ানী অনুসারীরা মনে করে তাদের ‘নবী’র কাছে আল্লাহ تعالى নতুন বাণী পাঠিয়েছিলেন, তাদের সব যুক্তি সূরা বাকারার শুরুতেই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমনকি যেসব চরম শিয়া অনুসারীরা মনে করে আলি(রা)−এর নবী হওয়ার কথা ছিল; ফেরেশতা জিবরাঈল ভুল করে মুহাম্মাদ عليه السلام-কে কু’রআন দিয়ে এসেছিল — তাদের এইসব ভ্রান্ত যুক্তিও এখানে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সূরা বাকারার ২, ৩, ৪−মাত্র এই তিনটি আয়াতে মহান আল্লাহ تعالى একদম নাস্তিকতা থেকে শুরু করে ইসলামের যতগুলো বিকৃত গোত্র রয়েছে, তাদের সবার খেল খতম করে দিয়েছেন! −এরকম আরও অনেক আয়াত রয়েছে কু’রআনে যেখানে আল্লাহ تعالى পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, নবী মুহাম্মাদ عليه السلام−এর পরে আর কোনো রাসুল আসবে না, কোনো বাণী পাঠানো হবে না। দেখুন ১৬:৪৩, ৪০:৭৮, ২০:৪৭, ৪:৬০, ৩৯:৬৫, ৪২:৩, ২:১৮৩, ১৭:৭৭।
আপনার আহমাদিয়া/কাদিয়ানী, শিয়া বন্ধুদেরকে বলুন কু’রআনের এই আয়াতগুলো ভালো করে বারবার পড়তে। −এরপর আর তাদের কোনোই সন্দেহ থাকার কথা নয়—إن شاء الله। একই সাথে আপনার গুরু পূজারী সূফী বন্ধুদেরকেও বলুন যে, তাদের গুরু এবং পিরের কাছে আল্লাহ تعالى যে ঐশী বাণী পাঠান না, সেটা কু’রআনে পরিষ্কার করে বলা আছে। কু’রআন মুত্তাকীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ পথ নির্দেশ। −এর পরে আমাদের আর কোনো ঐশী বাণীর দরকার নেই।[১০৬]
আমাদের সঠিক ধারণা থাকা দরকার তাওরাত এবং ইনজিল কী। তাওরাত হচ্ছে ছয়টি হিব্রু বাইবেল, যেগুলোর ইংরেজি সংস্করণ হচ্ছে: Genesis, Exodus, Leviticus, Numbers, Deuteronomy. এগুলো ইহুদিদের মূল ধর্মগ্রন্থ। এরকম অনেকগুলো বইকে একসাথে The Old Testament বলা হয়।
ইনজিল Gospel নামে পরিচিত – Matthew, Mark, Luke, and John। এগুলো মূলত খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ। এগুলোর ব্যাপারে মুসলিমদের অবস্থান হলো: ঈসা عليه السلام -কে যে ইনজিল দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো হারিয়ে গেছে এবং গস্পেল বলতে যা এখন মানুষের কাছে আছে সেগুলো সব মানুষের লেখা, যার মধ্যে কিছুটা হলেও আল্লাহর বাণী রয়েছে। এমনকি এটা আজকাল খ্রিষ্টানদেরও অবস্থান যে, ইঞ্জিলের আসল গ্রন্থগুলো হারিয়ে গেছে।
আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, কু’রআনই আল্লাহর تعالى পাঠানো একমাত্র ঐশীবাণী নয়। আল্লাহ تعالى মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য -এর আগেও বাণী পাঠিয়েছেন। নবী মুসা عليه السلام -এর কাছে তাওরাত এসেছিল, নবী ঈসা عليه السلام -এর কাছে ইনজিল এসেছিল। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ تعالى আমাদের আগেও মানুষকে পথ দেখিয়েছেন বিভিন্ন নবী এবং বাণীর মাধ্যমে। একদম প্রথম মানুষ আদম عليه السلام থেকে শুরু করে আজকে আমাদের সভ্যতা পর্যন্ত সব জাতি আল্লাহর تعالى কাছ থেকে পথ নির্দেশ পেয়েছে।
এই বিশ্বাসের মধ্যে দুটো ব্যাপার রয়েছে—
১) প্রথমত, এটা মানা যে: আজকে যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও আল্লাহর تعالى বাণী রয়েছে এবং আমাদেরকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। আমেরিকার কোনো এক পাদ্রী তার দলবল নিয়ে প্রতি বছর কু’রআন পোড়ায় দেখে[১১৭], আমরাও তার মতো বাইবেল পুড়িয়ে দেখিয়ে দেব না যে, আমরাও মুসলিমের বাচ্চা। আমরা সকল ধর্মের বইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা রাখি। খ্রিষ্টানরা কু’রআন পুড়িয়ে নিচে নামতে পারে, কিন্তু তাই বলে আমরা বাইবেল পুড়িয়ে তাদের মতো নিচে নামব না।
২) আমাদেরকে এটা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা যা-ই করছে সেটাই ভুল না। তাদের বিশ্বাস ভুল হতে পারে, তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস না করতে পারেন, বা মুহাম্মাদকে عليه السلام রাসূল হিসেবে বিশ্বাস না করতে পারেন। তবে তাদের পার্থিব সকল কাজই ভুল নয়। তাই আমরা তাদের প্রতি কোনো ঘৃণা দেখাব না। মনে করব না যে, তারা সব ভুল পথে আছে এবং তারা যা করে, তার কোনো কিছুই ঠিক নয়। আমরা মুসলিম। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে সৌভাগ্যবান জাতি। পৃথিবীতে আরও ৫০০ কোটি মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ تعالى ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সৌভাগ্য দেননি। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, আমাদের খ্রিষ্টান এবং ইহুদি ভাই বোনেরা কিছু প্রতারকের পাল্লায় পড়ে ভুল রাস্তায় চলে গেছে। আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে ডাক দিয়ে এনে, ভালো করে বুঝিয়ে শুনিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা। ভালো করে বোঝানোর পরেও তারা যদি না আসে, তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা কোনোভাবেই তাদের উপর জবরদস্তি করতে পারব না। আল্লাহই তাদের বিচার করবেন।
একই সাথে আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, রাসূল মুহাম্মাদ عليه السلام -এর জন্মের অনেক আগে থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যে তাওরাত এবং ইঞ্জিল পাওয়া যায়, সেগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন এবং বিকৃতি করা হয়েছে, যার কারণে সেগুলো আর মৌলিক, অবিকৃত অবস্থায় থাকেনি। সেগুলোর ব্যাপারে আমরা কেবল মৌলিকভাবে ঐশী গ্রন্থ হওয়ার বিশ্বাস করব, তবে সেগুলো পড়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছান যাবে না।
অধুনা কিছু মুসলিম আছেন, যারা শখের বসে তাওরাত বা ইঞ্জিল কিনে পড়েছেন। কিন্তু তারপরে তাদের মাথা গেছে একদম তালগোল পাকিয়ে। তারা কোনটা ইসলাম, কোনটা ইহুদি, কোনটা খ্রিষ্টান ধর্ম—সেসব নিয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। যেমন: কু’রআন, তাওরাত এবং ইঞ্জিলে আপনি নবী ইব্রাহিম عليه السلام -এর তিন ধরনের জীবনী পাবেন। আপনি যদি তিনটাই পড়েন, তাহলে তার সম্পর্কে আপনার ধারণা একেবারে গোলমাল পাকিয়ে যাবে। আপনি মনে করা শুরু করবেন যে, তিনি হয়তো ইহুদি ছিলেন। তিনি হয়তো একসময় মূর্তিপূজারি ছিলেন এবং পরে আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়েছিলেন।[১] আজকাল অনেক আধুনিক মুসলিম তাওরাত, ইঞ্জিল পড়ে দাবি করা শুরু করেছে যে, আজকের মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিষ্টানরা সবাই আসলে এক নবী ইব্রাহিম-এর عليه السلام উম্মত এবং আমরা তার ধর্মের উপরেই আছি। সুতরাং খ্রিষ্টান এবং ইহুদিরা কেউই ভুল পথে নেই, তারা সবাই জান্নাতে চলে যাবে। সুতরাং, তাদের কারো ধর্ম পরিবর্তন করার কোনোই দরকার নেই।
এধরনের মানুষরা আগেও অনেক ছিল, এখনো অনেক আছে। তাদের জন্য আল্লাহর تعالى জবাব:
তারা বলে, “তোমরা ইহুদি বা খ্রিষ্টান হয়ে যাও, সঠিক পথ পাবে”, বল (মুহাম্মাদ), “কখনোই না! আমরা ইব্রাহিমের ধর্ম অনুসরণ করি। এটাই সঠিক। সে কখনই মুশরিক (বহুঈশ্বরবাদী, মূর্তিপূজারি) ছিল না।” [২:১৩৫]
ইহুদিরা নিঃসঙ্কোচে দাবি করে যে, তাদের তাওরাতে কোনো বিকৃতি নেই এবং তা হুবহু আল্লাহর تعالى বাণী। আজকাল অনেক মুসলিমও ইহুদীদের বিভিন্ন দলিল এবং যুক্তি দেখে মনে করা শুরু করেছে: “সত্যিই তো! তাওরাত দেখি সত্যিই আল্লাহর تعالى বাণী! তাহলে তো আমাদেরও তাওরাত পড়া উচিত। আর আমার খ্রিষ্টান গার্ল ফ্রেন্ডদেরকে বিয়ে করলে কোনো সমস্যা নেই। তারাও তো আল্লাহর تعالى ধর্মের উপরই আছে।”
এ ধরনের মানুষরা কখনো কু’রআন ঠিকমতো বুঝে পড়েনি:
তোমরা (বিশ্বাসীরা) কি আশা করো যে ওরা-১ তোমাদেরকে বিশ্বাস করবে যখন ওদের-১ মধ্যে একদল-২ আল্লাহর বাণী শুনত এবং তারপর তা বোঝার পর তারা-২ তা জেনে বুঝেই বিকৃত করত, যখন ওরা-১ তা ঠিকই জানত? [২:৭৫]
এমনকি তারা তাওরাত এবং ইঞ্জিলগুলোও (গস্পেল) আসলে ঠিকমত পড়েনি। পড়লে দেখত যে আজকের বিকৃত তাওরাতে কীভাবে আল্লাহ تعالى এবং নবীদের عليه السلام নামে জঘন্য মিথ্যা কথা প্রচার করা হচ্ছে:
১) ইয়াকুব (Jacob) আল্লাহর تعالى সাথে কুস্তি করে জিতে গিয়েছিলেন! তারপর তাকে নাকি নতুন নাম ‘ইসরাইল’ দেওয়া হয়েছিলঃ
Your name will no longer be Jacob,” the man told him. “From now on you will be called Israel, because you have fought with God and with men and have won..” [১১৯]
২) আল্লাহ تعالى নাকি মানুষকে সৃষ্টি করে অনুতপ্ত হয়েছিলেন এবং তাঁর অন্তরে নাকি গভীর বেদনা হয়েছিল!
The LORD regretted that he had made human beings on the earth, and his heart was deeply troubled. [১২০]
৩) লুত নবী নাকি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গিয়েছিলেন এবং তার মেয়েদের সাথে … তিনি নাকি তার নাতিদের পিতা ছিলেন!
…And it came to pass on the morrow, that the firstborn said to the younger, Behold, I lay last night with my father: let us make him drink wine this night also; and go you in, and lie with him, that we may preserve seed of our father. 35 And they made their father drink wine that night also: and the younger arose, and lay with him; and he perceived not when she lay down, nor when she arose. 36 Thus were both the daughters of Lot with child by their father. … [১২১]
—এরকম একটি, দুটি নয়, শত শত জঘন্য, অশ্লীল ঘটনায় ভরা বিকৃত তাওরাত আজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যা আমরা সাধারণত বাইবেল বলে জানি। প্রথমত, এগুলো নবীদেরকে عليه السلام বিকৃত মানসিকতা এবং কামনা-বাসনার কালিমা দিয়ে, তাদেরকে একদম নিচে নামিয়ে দিয়েছে, যেখানে কি না মহান আল্লাহ تعالى পৃথিবীতে সবচেয়ে যোগ্য, পবিত্র মানুষদেরকেই নবী হিসেবে মনোনীত করতেন।
দ্বিতীয়ত, এই বাইবেলগুলো মহান আল্লাহকে تعالى এতটাই নিচে নামিয়েছে যে, তিনি এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে আর খুব একটা পার্থক্য বাকি রাখেনি। আজকাল পশ্চিমা চলচ্চিত্রে ‘গডকে’ মেঘের উপরে সাদা দাঁড়িওলা, আলখাল্লা পরা, মধ্যবয়স্ক এক বিশাল মানুষের আকৃতিতে দেখানো হয়। দেখানো হয় যে, তিনি স্বর্গে গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলছেন, হেঁটে বেড়াচ্ছেন। এগুলো সবই বাইবেলের (তাওরাতের) বিকৃত ধারণা থেকে এসেছে। এগুলো দেখতে দেখতে আমাদের মনের ভেতরে ব্যাপকভাবে শির্কের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আমরা মুসলিমরা কোনোভাবেই আল্লাহকে নিয়ে কখনোই এভাবে চিন্তা করি না। আল্লাহ تعالى কে?—তার এক অসাধারণ সংজ্ঞা সূরা ইখলাসে দেওয়া আছে, পড়ে দেখুন। এটা পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন ইসলামে আল্লাহর تعالى ধারণা কতখানি পবিত্র এবং যুক্তিযুক্ত।
একইভাবে তাওরাত এবং ইঞ্জিলে, যা আজকাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর কিছু নির্দেশ দেখলেই পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, সেটা কোনোভাবেই আল্লাহর تعالى বাণী হতে পারে না।
“Kill every male child and baby and kill every woman who is not a virgin. But save for yourself the virgin girls.” (Numbers 31:17-18)”
When…God gives (a city) into your hands, kill all the men in it…Do not leave alive anything that breathes.” (Deuteronomy 20:10-17)”
As for my enemies who do not want me (Jesus) to reign over them, bring them here and kill them in my presence.” (Luke 19:26-27)”
Do not think I (Jesus) have come to send peace on earth. I did not come to send peace, but a sword.” (Matthew 10:34)
ইহুদি এবং খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থে এইসব ভয়াবহ কথা লেখা থাকার পর তারাই আবার ইসলাম ধর্মকে বর্বর, মধ্যযুগীয়, আগ্রাসী ধর্ম বলে দাবি করে এবং আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদকে عليه السلام ক্ষমতালোভী, বর্বর, পাষণ্ড মানুষ হিসেবে কালিমা দেওয়ার চেষ্টা করে! আরও বড় লজ্জার ব্যাপার হচ্ছে তাদের আক্রমণ শুনে মুসলিমরাই আমতা আমতা করে পালিয়ে যায়। কু’রআনের শান্তির বাণীকে ঠিকভাবে তুলে ধরে তাদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে পারে না। আল্লাহ تعالى যেখানে কু’রআনে বলেন:
“ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই”—কু’রআন ২:২৫৬
“আর শুধু তাদের সাথে লড়াই করো, যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।”— কু’রআন ২:১৯০
“যদি তারা শান্তি চুক্তি করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে, তবে তুমিও (মুহাম্মাদ) তা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করবে এবং আল্লাহর উপরে ভরসা রাখো।”—কু’রআন ৮:৬১
যিনি এক ধর্মগ্রন্থে—এরকম শান্তিপ্রিয় কথা বলেন, তিনি কীভাবে তাঁরই পাঠানো আরেকটি ধর্মগ্রন্থে শিশুদের হত্যা করার নির্দেশ, বিবাহিত মেয়েদেরকে মেরে ফেলে শুধু কুমারী মেয়েদেরকেই বাঁচিয়ে রাখার মতো জঘন্য নির্দেশ দিতে পারেন? সৃষ্টিকর্তা মানুষের মতো নন যে, যখন তার মাথা গরম থাকে, তখন তিনি খুনাখুনির নির্দেশ দেন, এবং পরে একসময় তার মাথা ঠাণ্ডা হলে, তিনি শান্তিপ্রিয়ভাবে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। একজন সৃষ্টিকর্তার বাণীর মধ্যে কখনোই অসঙ্গতি থাকতে পারে না, সেটা হাজার বছরের ব্যবধানে অবতীর্ণ হলেও। যদি থাকে, তাহলে সেটা আর সৃষ্টিকর্তার বাণী নয়, বরং সেটা মানুষের রচনা।
পুরুষদের মাথায় যত নোংরা ফ্যান্টাসি আছে, তার সব আপনি বাইবেলে পাবেন, কিছুই বাকি নেই। বাইবেলের গ্রন্থগুলো পুরো মাত্রায় পর্ণগ্রাফি। আপনি কখনই বাইবেলের বইগুলো আপনার ছোট বাচ্চাদের সাথে বা কিশোর বয়সের ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে একসাথে বসে পড়তে পারবেন না।
অথচ কু’রআন পড়ে দেখুন। পুরো কু’রআনে কোনো জায়গায়, কোনো ধরনের গোপন অঙ্গের কথা, নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গতার সরাসরি বর্ণনা খুঁজে পাবেন না। আল্লাহ تعالى অত্যন্ত মার্জিত শব্দ ব্যবহার করে, সর্বোচ্চ শালীনতা বজায় রেখে আমাদের যৌনতা সম্পর্কে ইসলামের বিধিনিষেধগুলো শিখিয়েছেন। একজন আরব কিশোর-কিশোরীর কখনোই কু’রআন পড়ে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একজন আরব বাবা-মা রমজানের তারাবীতে তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সাথে নিয়ে গিয়ে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পুরো কু’রআন খতম শুনে আসতে পারেন, কিন্তু কখনোই কোনো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েন না।
মুসলিমরা কখনোই বিশ্বাস করে না যে, আজকের ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থে যে বাণী পাওয়া যায়, তা অবিকৃতভাবে আল্লাহর বাণী। কু’রআনের ভাষা এবং আজকালকার তাওরাত, ইঞ্জিলের ভাষার মধ্যে এতই আকাশ পাতাল পার্থক্য যে, সেগুলো পড়লেই বোঝা যায় যে, প্রচলিত এই তিন ধর্মগ্রন্থের উৎস একই সত্তা নন।
এখন প্রশ্ন আসে, কেন আল্লাহ্ تعالى আদমকে عليه السلام একবারে কু’রআন দিয়ে পাঠালেন না? প্রথমে কু’রআন দিয়ে পাঠালেই তো এত ধর্ম তৈরি হতো না? বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের মধ্যে এত মারামারি হতো না?
আল্লাহ تعالى মানুষকে পথ নির্দেশ তখনি দেন, যখন সেই পথ নির্দেশের প্রয়োজন মানুষের হয় এবং মানুষের তা বুঝে বাস্তবায়ন করার মতো অবস্থা থাকে। যেমন, আদমকে عليه السلام যে ধর্মীয় নিয়মকানুন দেওয়া হয়েছিল, সেই নিয়ম অনুসারে ভাইবোন বিয়ে করতে পারত। যদি তাকে আজকের কু’রআন দেয়া হতো, তাহলে আদম عليه السلام-এর ছেলেমেয়েদের পর আর কোনো বংশধর আসত না। মানব জাতি এক প্রজন্মের পরেই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।[১০৫] একই ভাবে তাওরাতের আগে মানুষের কোনো শারিয়াহ দরকার ছিল না। তাওরাত ছিল প্রথম শারিয়াহ। কু’রআনে সেই শারিয়াহকে যুগোপযোগী করার জন্য এবং সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো মীমাংসা করার জন্য আরও উন্নত শারিয়াহ দেওয়া হয়েছে।
অনেকে প্রশ্ন করেন—আল্লাহ تعالى কেন একটাই ধর্ম দিলেন না? কেন ইহুদি, খ্রিষ্টান, ইসলাম, হিন্দু এতগুলো ধর্ম দিলেন?
প্রথমত, আল্লাহ تعالى মোটেও এতগুলো ধর্ম দেন নি। আদম عليه السلام থেকে শুরু করে মুহাম্মাদ عليه السلام পর্যন্ত আল্লাহ মানুষকে একটাই ধর্ম দিয়েছেন “ইসলাম”, যার অর্থ আল্লাহর تعالى ইচ্ছার কাছে আমাদের ইচ্ছার আত্মসমর্পণ। মানুষই আদি ধর্ম গ্রন্থগুলোকে বিকৃত করে, নিজেদের বানানো নাম দিয়ে আলাদা আলাদা ধর্ম বানিয়ে ফেলেছে। ধর্মগুলোর নামগুলো দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, সেই ধর্ম গুলো আসলে মানুষের বানানো। জুডায়িজম (ইহুদি) ধর্মের নাম এসেছে জুডা নামের একটি গোত্র থেকে। খ্রিষ্টান ধর্মের নাম এসেছে খ্রিস্ট থেকে। বাইবেলের কোথাও আপনি এই নামগুলো খুঁজে পাবেন না। হিন্দু ধর্মের নাম এসেছে হিন্দুস্থান থেকে। বেদান্তিক ধর্মের নাম এসেছে বেদ ধর্মগ্রন্থের নাম থেকে। ইসলাম একমাত্র ধর্ম যার নাম সেই ধর্মের মূলগ্রন্থে সৃষ্টিকর্তা নিজেই বলে দিয়েছেন। বাকি সব ধর্মের নাম মানুষের দেওয়া। তাওরাত, ইনজিল, যবুর, কু’রআন—সব ধর্মগ্রন্থ একটাই ধর্ম প্রচার করে গেছে: ইসলাম।
এবার আয়াতটির শেষের অংশটি দেখুনঃ
“… তারা পরকালে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে।”
এখানে আল্লাহ يُوقِنُونَ ব্যবহার করেছেন, যা ইয়াকি’ন থেকে এসেছে।—এর অর্থ কোনো ব্যাপারে একেবারে সন্দেহাতীত ভাবে বিশ্বাস করা। যেমন: আমরা জানি আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে। এ নিয়ে আমাদের কারও কোনো সন্দেহ নেই। আমরা এটা কোনো কারণে এতটাই সন্দেহাতীত ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমরা কেউ কৌতূহলের বসেও আগুনে হাত দিয়ে দেখতে যাব না: সত্যিই হাত পোড়ে কি না। ইয়াকি’ন হচ্ছে ঠিক এই ধরনের সন্দেহাতীতভাবে বিশ্বাস করা।
এখানে আল্লাহ تعالى বলছেন যে, মুত্তাকীরা সন্দেহাতীত ভাবে আখিরাতে বিশ্বাস করে, অর্থাৎ তাদের মনে কোনো সন্দেহই নেই যে, একদিন সব ধ্বংস হয়ে যাবে, তাদেরকে আবার জীবিত করা হবে, তাদের সব কাজের বিচার হবে। তারা যেন একদম নিজের চোখে জাহান্নামের ভয়ংকর আগুন দেখতে পায়, একদম নিজের কানে জান্নাতের ঝর্ণার কলকল ধ্বনি শুনতে পায়।
একবার আমার হাতে গাড়ির রেডিয়েটর বার্স্ট করেছিল। রেডিয়েটরের ভিতরে অতি উত্তপ্ত পানি থাকে। সেই পানি লেগে পুরো হাত, ঘাড়ের চামড়া ঝলসে গিয়েছিল। গরুর গলায় যেমন একগাদা চামড়া ঝুলে থাকে, সেরকম আমার হাত থেকে একগাদা চামড়া ঝুলতে থাকতো। ছোট বাচ্চারা ভয়ে আমার কাছে আসতো না। আমি তিন দিন, তিন রাত যতক্ষণ জেগে থাকতাম প্রচণ্ড ব্যথায় গোঙাতাম আর আল্লাহকে تعالى ধন্যবাদ দিতাম: আমাকে জাহান্নামের আগুনের একটা স্যাম্পল এই পৃথিবীতেই দেওয়ার জন্য, কারণ, এরপরে আমার জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে ইয়াকি’ন না হলেও, যথেষ্ট কঠিন ধারণা হয়ে গিয়েছিল।
একইভাবে জান্নাত কেমন হবে, সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে হলে এবং জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করতে হলে, আমাদের সবার উচিত আল্লাহর تعالى তৈরি এই অসাধারণ সুন্দর পৃথিবীটা ঘুরে দেখা এবং সৃষ্টিজগতকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। আল্লাহ تعالى পৃথিবীটাকে অনেক সুন্দর করে বানিয়েছেন, যেন আমরা জান্নাত কত সুন্দর হবে, সেটা কিছুটা হলেও ধারণা করতে পারি। তিনি জানেন যে, চোখে না দেখলে আমাদের জন্য কোনো কিছু বিশ্বাস করা কঠিন এবং সেটা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি করা আরও কঠিন। একারণেই তিনি পৃথিবীকে অসম্ভব সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, যেটা দেখে আমরা তাঁর অসাধারণ সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয়ে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যাব এবং জান্নাতে যাবার জন্য এমন আগ্রহ তৈরি করতে পারব যে, দুনিয়ার কামনা-বাসনা-মোহ কোনোটাই আমাদেরকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা থেকে দূরে রাখতে পারবে না।
কয়েক বছর আগেও আমি জান্নাতের কথা খুব একটা ভাবতাম না। আমার কথাবার্তা, কাজকর্মে, চালচলনে এমন কিছু ছিল না, যেটা দেখে কেউ বলতে পারত যে, আমি জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী। তারপর একদিন আমি লেক ডিসট্রিক্টে গেলাম। বিশাল এক পাহাড়ে চার ঘণ্টা উঠে সামনে তাকিয়ে দেখলাম যতদূর চোখ যায় খোলা নীল আকাশের নিচে বিশাল সব পাহাড়ের সারি এবং তার মাঝখানে এক পরিষ্কার নীল হ্রদ। হঠাৎ করে এই প্রচণ্ড সৌন্দর্যের মুখোমুখি হয়ে আমি ‘থ’ হয়ে গেলাম।
জান্নাতের বর্ণনা দেওয়া একের পর এক আয়াত আমার মনের মধ্যে আসতে লাগল। ভিজে আসা চোখে আমি তাকিয়ে থাকলাম আর আফসোস করতে থাকলাম, আমার মহান সৃষ্টিকর্তা আমাকে কতবার বলেছেন এই অসাধারণ সৌন্দর্য আমি লক্ষ কোটি বছর, অনন্তকাল উপভোগ করতে পারব—দরকার আমার পক্ষ থেকে একটু চেষ্টা, একটু ত্যাগ—কিন্তু আমি সেটা করিনি।
আখিরাতে এত গভীর বিশ্বাস—কেন মুত্তাকী হওয়ার জন্য একটা শর্ত? আখিরাতে এরকম সন্দেহাতীত বিশ্বাসের প্রয়োজন কী? কেন আল্লাহ تعالى একে এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন যে, তিনি কু’রআনের শুরুতেই এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন?
যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তি মনে প্রাণে উপলব্ধি করতে না পারছে এবং জান্নাতের সুখের উপর নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করতে না পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ধর্ম শিখিয়ে কোনো লাভ হবে না। ধর্ম তার কাছে শুধুই কিছু তত্ত্ব কথা হয়ে থাকবে। ধর্মীয় নিয়মকানুনগুলো মানার জন্য সে কোনো আগ্রহ খুঁজে পাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য মানুষ তাকে দেখতে পাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকবে, কিন্তু তারপর একা হলেই তার আসল চেহারা বের হয়ে যাবে। দেশের আইন-কানুন তাকে হয়তো সমাজে, ঘরের বাইরে অন্যায় করা থেকে দূরে রাখতে পারে। কিন্তু কোনো নির্জন রাস্তায়, অন্ধকার পার্কে, নিজের ঘরের ভেতর, নিজের পরিবারের সাথে, নিজের সাথে জঘন্য কাজ করা থেকে তাকে আটকাতে পারবে না। এর জন্য একমাত্র সমাধান হচ্ছে তাকওয়া এবং বিশেষ করে আখিরাতের প্রতি প্রচণ্ড বিশ্বাস।
আখিরাতের উপর মানুষের বিশ্বাস তৈরি করতে না পারলে কী হয়, তার ভয়াবহ উদাহরণ পাশ্চাত্যের দেশগুলো। সেই দেশগুলোতে আইন খুবই কঠিন, আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়ন করার জন্য বাহিনীর কোনো অভাব নেই, রাস্তা ঘাটে, দোকানপাটে সিকিউরিটি ক্যামেরার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তারপরেও সেই দেশগুলোতে যেসব জঘন্য অন্যায় হয় এবং যে পরিমাণে হয় তা যেকোনো মুসলিম দেশের পরিসংখ্যানকে বহুগুনে ছাড়িয়ে যাবে। শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি ৬জন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়।[১০৭] মাসে ৫৬,০০০ -এর বেশি, ঘণ্টায় ৭৮টি ধর্ষণ হয়।[১০৮]
সুইডেন বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ, বসবাসযোগ্য, সুখময় ৫টি দেশের মধ্যে একটি। সেখানে শিক্ষার হার সবচেয়ে বেশি ৯৯%; বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে এটি ইউরোপের দ্বিতীয় শীর্ষতম দেশ। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি যে দেশ দান করে সেটা সুইডেন।[১১০] কিন্তু সেই দেশে ধর্ষণের পরিমাণ পুরো ইউরোপে সবচেয়ে বেশি, এমনকি ইংল্যান্ডের মত সাংস্কৃতিক এবং নৈতিক অবক্ষয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি দেশের থেকেও দ্বিগুণ।[১০৭] শুধু শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থ, বিত্ত, আইন,শৃঙ্খলা থাকলেই যে মানুষকে পশু হওয়া থেকে আটকে রাখা যায় না, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ সুইডেন।[১১১] আরও উল্লেখযোগ্য হলো, সুইডেন বিশ্বের তৃতীয় নাস্তিক প্রধান দেশ।
ইংল্যান্ডে প্রতি সেখানে প্রতি চার জনের একজন কিশোর-কিশোরী যৌন অত্যাচারের শিকার হয়।[১১২] আমেরিকাতে প্রতিবছর বাচ্চাদের নিয়ে বানানো পর্নমুভি থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যবসা হয়।[১০৮] এই হলো আধুনিক দেশের কঠিন আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা থাকার পরের অবস্থা। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে মানুষ যে নিকৃষ্টতম পশু হয়ে যেতে পারে, তার উদাহরণ হলো এসব ধর্মবিমুখ পাশ্চাত্য দেশগুলো।
নাস্তিকদের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে, নাস্তিকরা নৈতিকভাবে ধার্মিকদের থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি ভালো হয়। তাদের দৃষ্টিতে ধার্মিক মানুষরা হচ্ছে অর্ধশিক্ষিত, বর্বর ধরনের, নিচু নৈতিকতার মানুষ; এরা চারটা বিয়ে করে, বউদেরকে ঘরে আটকে রাখে, ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত হতে দেয় না। একারণে নাস্তিকরা একটি ধারণা সবার মধ্যে প্রচার করার চেষ্টা করছে: “মানুষের ভালো থাকার জন্য ধর্মীয় বইগুলোর কোনো দরকার নেই। মানুষ নিজেই নৈতিক নিয়ম-কানুন তৈরি করতে পারে এবং প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে তার নিজের নৈতিকতার ধারণা এবং মূল্যবোধ অনুসারে জীবনযাপন করার। ধর্ম কারও উপর নৈতিকতা, মূল্যবোধ জোর করে চাপিয়ে দিতে পারে না। এটা অন্যায়।
যারা এই ধারণায় বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি একটা প্রশ্ন করতে পারেন (খুবই আপত্তিকর, কিন্তু তাদের মোটা মাথায় ঢোকানোর জন্য লিখতে বাধ্য হচ্ছি), “ভাই, আপনার স্ত্রীকে আমার ভালো লেগেছে। আজকে রাতে আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। আমার দৃষ্টিতে এটা কোনো অনৈতিক কাজ নয়, কারণ আপনার স্ত্রীরও আমার সাথে যেতে কোনো আপত্তি নেই। মাঝখান থেকে আপনি কোনো বাঁধা দিলে, সেটা একটা অনৈতিক ব্যাপার হবে, কারণ আপনি— আমার এবং আপনার স্ত্রীর চাওয়ার মধ্যে বাঁধা দিতে পারেন না।”
দেখুন তাদের নৈতিকতা কোথায় যায়। তাদের যুক্তি অনুসারে যদি পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ চলত, তাহলে মানব সমাজগুলো একেকটা চিড়িয়াখানা হয়ে যেত, যেখানে মানুষ আর বানরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকতো না। পৃথিবীর বাকি দেশগুলো সুইডেন হতে আর বেশি বাকি থাকতো না।
কানাডাতে University of Lethbridge ১৬০০ মানুষের উপর পরিসংখ্যান নিয়ে দেখিয়েছে যে, যারা নাস্তিক, তাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ, ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আশংকাজনক ভাবে খারাপ। যেমন: ক্ষমা, নম্রতা, ধৈর্য, উদারতার মাপ কাঠিতে ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের থেকে নাস্তিকরা প্রায় অর্ধেক—[১১৪]
একারণেই আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সূরা বাকারার শুরুতেই বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহ تعالى আমাদেরকে সবসময় দেখছেন—এই ব্যাপারে যারা সবসময় পূর্ণ সচেতন থাকে, যারা মানুষের চিন্তার বাইরে এমন সব বিষয়ে বিশ্বাস করতে পারে, যারা সালাতকে তাদের জীবনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে, যারা নিজেদের সম্পদকে আল্লাহর تعالى দেওয়া উপহার মনে করে মানুষকে বিলিয়ে দিতে পারে এবং যারা নবী عليه السلام এবং তার আগে পাঠানো ঐশীবাণীর উপর বিশ্বাস রাখতে পারে—
তারাই তাদের প্রভুর কাছ থেকে আসা সঠিক পথে আছে এবং তারাই নিশ্চিতভাবে সফল।
আল্লাহ تعالى এখানে মুত্তাকিদেরকে—যারা তাদের জীবনে সফল হতে পারে—তাদেরকে مُفْلِحُون বলে সম্বোধন করেছেন, যা فَلاّح ফাল্লাহ অর্থাৎ কৃষক বা চাষি শব্দটি থেকে এসেছে। কৃষক তার কাজের প্রতিদান সপ্তাহে বা মাসে একবার পায় না। সে দীর্ঘ পরিশ্রম করে জমি চাষ করার পর আশা নিয়ে বুক বেধে থাকে যে, একদিন ভালো ফলন হবে। কৃষক জানে যে, সে নিজে শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না। তার আল্লাহর تعالى অনুগ্রহ দরকার—ঠিকমত রোদ এবং যথেষ্ট বৃষ্টি দরকার। না হলে তার এত পরিশ্রম সব বিফলে যাবে। আল্লাহ تعالى এখানে মুফ্লিহুন শব্দটি ব্যবহার করে মুত্তাকীদেরকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তাদের জীবনটা মোটেও সহজ হবে না। তাদেরকে যদি জান্নাত পেতে হয়, তাহলে তাদেরকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে এবং শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না, আল্লাহর تعالى অনুগ্রহ না পেলে তাদের সব পরিশ্রম বিফলে যাবে। তারা লম্বা পরিশ্রম করার পর একদিন গিয়ে বিরাট প্রতিদান পাবে। তাই মুত্তাকীদেরকে কৃষকদের মতো ধৈর্য ধরতে হবে, একটানা পরিশ্রম করে যেতে হবে এবং আল্লাহর تعالى অনুগ্রহের উপর নির্ভর করতে হবে। একারণেই আল্লাহ تعالى সবচেয়ে উপযুক্ত মুফ্লিহুন শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
Last Edit 30 October 2020